নতুন নোট, পুরোনো সমস্যা: এটিএম বুথে যাচ্ছেন, কিন্তু টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছে মেশিন!
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ডিজাইনের ২০, ৫০ এবং ১ হাজার টাকার নোট বাজারে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে চরম বিভ্রান্তি ও ভোগান্তি।
ঈদুল আজহার আগে দেশজুড়ে নতুন রঙে, নতুন ডিজাইনে ছাপানো নোট বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নোটগুলোতে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য—যেমন কান্তজির মন্দির, জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় পাখি দোয়েলসহ নানা দৃষ্টিনন্দন উপাদান। উদ্দেশ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আধুনিক নোটের যুগে প্রবেশ। কিন্তু বাস্তবতা যেন ভিন্ন এক করুণ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করছে।
এটিএম মেশিন নিচ্ছে না নতুন টাকা:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে এমন বেশ কিছু ভিডিও, যেখানে দেখা গেছে মানুষ হাতে নতুন ১,০০০ টাকার নোট নিয়ে এটিএম বুথে ঢুকছে—কিন্তু মেশিন সেই টাকা গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দিচ্ছে। অনেকে আবার ব্যাংকের বুথে দাঁড়িয়ে হতাশ হয়ে বলছেন, "এই টাকা নাকি মেশিন চিনতেই পারছে না!"
দোকানদাররাও নিচ্ছেন না নতুন নোট:
শুধু এটিএম মেশিন নয়, দোকানদাররাও নতুন নোট নিতে দ্বিধাগ্রস্ত। অনেকেই বলছেন, তারা নিশ্চিত না এই নোট আসল কি না। নতুন ডিজাইনের কারণে অনেকেই এটিকে 'খেলনা নোট' বলেও আখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, তারা প্রথমবার এমন নোট দেখছেন এবং তাই সন্দেহ থেকেই নোট গ্রহণ করতে চাচ্ছেন না।
একজন নাগরিকের অভিজ্ঞতা:
ঢাকার মিরপুর এলাকার এক ক্রেতা বলেন, “আমি একটি এটিএম থেকে টাকা তুলতে গিয়ে নতুন ১ হাজার টাকার নোট পাই। কিন্তু এই টাকা দিয়ে বাজার করতে গিয়ে দেখি দোকানদার কেউই এই টাকা নিতে রাজি না। এক দোকানদার তো সরাসরি বলে বসলো ‘ভাই, এটা তো খেলনা নোট মনে হচ্ছে’। এতটা অপমানজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, ভাবিনি।”
সোশ্যাল মিডিয়ার তোপ:
এমন পরিস্থিতিতে ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন উঠেছে সমালোচনার ঝড়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, “যখন নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়, তখন কি ব্যাংকিং সিস্টেমকে জানিয়ে বা তাদের প্রস্তুত করে ছাড়া হয়নি?” কেউ কেউ আবার এটিকে অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার প্রতিফলন হিসেবেও দেখছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “নতুন নোট ছাড়ার আগে ব্যাংকগুলো, এটিএম মেশিন, এবং দোকানিদের যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ ও অবহিত না করায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এটিএম মেশিনগুলো নির্দিষ্ট মাপ ও প্রিন্ট অনুযায়ী কনফিগার করা থাকে। নতুন নোট যদি সেই কনফিগারেশনের বাইরে যায়, তবে মেশিন সেটি গ্রহণ করবে না। তাই এই সমস্যা প্রযুক্তিগত হলেও এর পেছনে পরিকল্পনার ঘাটতি স্পষ্ট।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায় এড়ানো নয়:
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানা গেছে, “এটি একটি সাময়িক সমস্যা। ইতোমধ্যে এটিএম অপারেটরদের জানানো হয়েছে যাতে তারা দ্রুত সিস্টেম আপডেট করে। দোকানদারদের ক্ষেত্রেও প্রচার ও সচেতনতা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তবে দেশের সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এখন—“একটি জাতীয় ব্যাংক কিভাবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রস্তুতি ছাড়া বাস্তবায়ন করে?”
মানুষের আস্থার প্রশ্ন:
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা রাখা জনগণের মৌলিক অধিকার। কিন্তু এমন অদূরদর্শিতা ও প্রস্তুতিহীনতার কারণে যদি নতুন নোটই ব্যবহার করা না যায়, তবে তা শুধু বিব্রতকর নয়, বরং দেশের আর্থিক খাতের প্রতি জনসাধারণের আস্থা হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
উপসংহার:
বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট ছাপানোর প্রযুক্তি হয়তো আধুনিক হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়নের পরিকল্পনা এখনো যেন অনেকটাই পিছিয়ে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তব করতে হলে প্রয়োজন বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি, সময়োপযোগী পরিকল্পনা এবং সর্বোপরি জনগণের ভোগান্তি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ।