ঈদের আগেই সাগরে শক্তিশালী দুই ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা, তটস্থ উপকূল
ঈদের আনন্দের মাঝেই উপকূলীয় অঞ্চলে বাড়ছে উদ্বেগ। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মে মাসের শেষ সপ্তাহে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে পরপর দুটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। ইতোমধ্যেই এসব অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে আধুনিক আবহাওয়া মডেল।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ফেসবুক পোস্টে জানান, আগামী ২৭ থেকে ৩০ মের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে ভারতের ওড়িশা উপকূল এবং মিয়ানমারের রাখাইন উপকূলের মধ্যবর্তী এলাকায় আঘাত হানতে পারে।
একই সপ্তাহে দুই সাগরে ঝড়!
এই সতর্কবার্তায় নতুন মোড় এসেছে আরব সাগরের দিক থেকেও। মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, একই সপ্তাহে আরব সাগরেও একটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আরব সাগরের ঝড়টি আগে সৃষ্টি হলে এবং বঙ্গোপসাগরের ঝড়টি পরে সৃষ্টি হয়, তাহলে পরবর্তী ঝড়টি বেশি ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কার্যালয় পূর্ব নির্ধারিত ঘূর্ণিঝড়ের নাম তালিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের প্রথম ঝড়টি হবে ‘শক্তি’ এবং পরবর্তীটির নাম ‘মন্থা’। ফলে, আরব সাগরে ‘শক্তি’ সৃষ্টি হলে বঙ্গোপসাগরের ঝড়টির নাম হবে ‘মন্থা’, কিংবা উল্টোও হতে পারে—এটা নির্ভর করছে কোন সাগরে আগে ঝড়টি তৈরি হয়।
‘মন্থা’ আরও ভয়াবহ হতে পারে
পলাশের ব্যাখ্যায় উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য—যদি আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড়টি বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের আগে তৈরি হয়ে দ্রুত দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে বঙ্গোপসাগরের ঝড়টি অতিমাত্রায় শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। এর ফলে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের প্রস্তুতি শুরু করার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাব্য সময়
আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাস মডেল অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়টি সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে ২৯ থেকে ৩০ মের মধ্যে উপকূলে আঘাত হানার। যদিও এখনো নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না এটি কোথায় এবং কী পরিমাণ শক্তি নিয়ে আঘাত হানবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের আচরণে নতুন নতুন বৈচিত্র্য দেখা দিচ্ছে। গত ৫ বছরে মে মাসেই দেশে পাঁচটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। যার মধ্যে রয়েছে আম্ফান, ইয়াস, মোখা এবং সর্বশেষ রিমাল।
প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এখনই
আবহাওয়াবিদরা উপকূলবাসী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম পূর্বাভাস সত্ত্বেও অনেক সময় প্রস্তুতির অভাবে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তাই সময় থাকতে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা, সঞ্চিত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা এবং যথাযথ সতর্কতা ব্যবস্থা চালু রাখার তাগিদ দিচ্ছেন তারা।
বর্তমানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরও পরিষ্কার হবে। তবে, এখনই যে এই ঘূর্ণিঝড়গুলোকে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না, সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
ঈদের আগমনের আনন্দের মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছায়া যেন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে সতর্ক অবস্থানে রেখেছে। এখন সময় সচেতনতার, প্রস্তুতির এবং প্রার্থনার—যেন এই দুর্যোগ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির কারণ না হয়।



















