ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের ফি অনলাইনে পরিশোধ, স্মার্ট আইডি কার্ড, রেজাল্ট ও সার্টিফিকেট প্রসেসিং সফ্টওয়্যার আপডেট, ক্যাম্পাসজুড়ে ওয়াইফাই চালু— এসব বিষয় নিয়ে আইসিটি সেল এক প্রেস ব্রিফিং করেছে। রবিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবনের আইসিটি সেল কার্যালয়ে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহজাহান আলী, অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা দেশের যে-কোনো স্থান থেকে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ফি ও অন্যান্য পেমেন্ট পরিশোধে নিজস্ব অ্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। খুব শিগ্গিরই এর পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হবে। গত ১৩ এপ্রিল আইসিটি সেল কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য আরএফআইডি প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট আইডি কার্ড চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কার্ড বিতরণ শুরু হবে, যা ভবিষ্যতে ক্যাশলেস পেমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গেও যুক্ত করা হতে পারে।
আরও জানা যায়, গত ২০ আগস্ট বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ব্র্যাকনেট লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ ২৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নত ওয়াইফাই ও ডিজিটাল নেটওয়ার্ক অবকাঠামো স্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর থেকে উপর্যুক্ত তিনটি বিষয়ে ধাপে ধাপে কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব কাজে সামগ্রিক ভাবে সহযোগিতা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল।
রেজাল্ট প্রসেসিং সফ্টওয়্যার আপডেটের বিষয়ে অধ্যাপক শাহজাহান আলী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ করে মাস্টার্স পর্যায়ের রেজাল্ট প্রকাশে সমস্যা হচ্ছিল। কারণ পূর্ববর্তী সফ্টওয়্যার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখন নতুন চুক্তি হয়েছে, তারা আবার কাজ শুরু করেছে এবং অনেক সমস্যা ইতোমধ্যেই সমাধান হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে সার্টিফিকেট ও মার্কশিট আবেদন করার ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। হাতে লেখা আবেদন লাগবে না, শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই এসব সেবা নিতে পারবে। ভবিষ্যতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একটি ‘স্টুডেন্ট পোর্টাল’ তৈরি করা হবে, যেখানে তাদের অ্যাকাডেমিক ও ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যবহার করা যাবে।”
ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের বিষয়ে অধ্যাপক শাহজাহান আলী বলেন, “ইসলামী ব্যাংক নিজস্ব সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ সম্পন্ন করেছে। উইন্টার ভ্যাকেশনের পর জানুয়ারির প্রথম দিকে পাইলট প্রকল্প চালু হবে। শিক্ষার্থীরা দেশের যে-কোনো প্রান্ত থেকেই ফি দিতে পারবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ইসলামী ব্যাংকের ডেবিট কার্ড দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে অনলাইনে ফি পরিশোধ করা যাবে। পাশাপাশি অগ্রণী ব্যাংকের বিদ্যমান সিস্টেমও সচল থাকবে, যা আরও শিক্ষার্থী-বান্ধব করতে কাজ চলছে। শিক্ষার্থীদের আর লাইনে দাঁড়াতে হবে না; পুরো প্রক্রিয়াই হবে ঝামেলাহীন।
স্মার্ট আইডি কার্ডের বিষয়ে অধ্যাপক শাহজাহান আলী বলেন, “কার্ডের মধ্যে থাকা ডেটা সেন্ট্রাল ডাটাবেজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ভবিষ্যতে এই কার্ড দিয়েই শিক্ষার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপস্থিতি, প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ বা বিভিন্ন সেবার অ্যাক্সেস পেতে পারবে। কার্ডের সম্পূর্ণ সুফল পেতে হলে প্রতিটি জায়গায় রিডার মেশিন ও কম্পিউটার ইন্টিগ্রেশন দরকার হবে। আমরা ধাপে ধাপে এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছি। প্রথমে লাইব্রেরিতে পরীক্ষামূলকভাবে চালুর চিন্তা করছি। সব শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্মার্ট আইডি কার্ড চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। বাজেট স্বল্পতার কারণে আমরা এখনো এ বিষয়ে তেমন একটা কাজ শুরু করতে পারি নি।
উন্নত ওয়াইফাই ও ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বিষয়ে অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলাম জানান, "ওয়াইফাই ও নেটওয়ার্ক অবকাঠামো স্থাপন করা হচ্ছে। আগামী মার্চ মাস নাগাদ আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা এর পূর্ণ সুবিধা নিতে পারবে। আর পুরো ক্যাম্পাসে এটি বাস্তবায়ন করতে গেলে ধাপে ধাপে করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পক্ষে থেকে এসব বরাদ্দ দেওয়া দুষ্কর। প্রজেক্ট ছাড়া এসব কাজ করা অনেক কঠিন।"
বাজেট সংকটের বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন পরিচালক। তিনি বলেন, “আমরা প্রায়ই প্রশাসনের কাছ থেকে বাজেট চাইলে বলা হয় সীমিত বরাদ্দের কারণে সব কাজ একসাথে করা সম্ভব হয় না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় সহায়তা করছে। বড়ো পরিসরে টাকা ম্যানেজ করা কিছুটা জটিল, কারণ আমলাতান্ত্রিক নিয়ম-কানুন আছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “ধাপে ধাপে হলেও এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে এবং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্মার্ট সিস্টেমে রূপান্তরিত হবে। আমরা চাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরোপুরি ডিজিটাল ও অটোমেটেড ক্যাম্পাসে রূপ দিতে। ফি প্রদান, রেজাল্ট, সার্টিফিকেট, প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ– সব কিছুই এক সিস্টেমের আওতায় আসবে।”



















