ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সর্বশেষ বিবৃতিতে প্রকাশিত হয়েছে, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইআইইউ) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শনিবার (২১ জুন) দুপুরে ডিএমপি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের একাংশ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৮টায় নতুনবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থীরা বারবার পুলিশ সদস্যদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করে চলাচলের পথ অবরুদ্ধ রাখে, যার ফলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ কর্মীরা অনেকবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে যাতে জনগণের চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি না হয়, তবে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় ছিল। সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ বাধ্য হয়ে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে ধাক্কাধাক্কি হয় এবং পরিস্থিতি কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ হয়। পরবর্তীতে সকাল পৌনে ১১টায় শিক্ষার্থীরা আবারও রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
ডিএমপি জানায়, পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলপ্রয়োগ এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপি আরও উল্লেখ করেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু পক্ষ বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে যা ভিত্তিহীন। তাই সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, অসংযত বক্তব্য থেকে বিরত থাকুন যাতে পরিস্থিতি আরও জটিল না হয়। বাড্ডা-কুড়িল রোডের এক পাশে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
ইআইইউ শিক্ষার্থীরা তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। তাদের মতে, এই বহিষ্কারাদেশ তাদের শিক্ষাজীবনের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এটি অন্যায়। তারা দাবি জানাচ্ছে যে, প্রশাসন তাদের সমস্যাগুলোর প্রতি আরও সংবেদনশীল হোক এবং তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করুক। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বিভিন্ন সময় নতুন মোড় নিয়েছে এবং মাঝে মাঝে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ডিএমপি জানায়, তারা আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আরও সুষ্ঠু সংলাপের মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ করার জন্য কাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা চলছে যাতে বিক্ষোভের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের দাবি আদায় করা যায়। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমান সময়ের বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রায়শই সামাজিক ও শিক্ষাজীবনের অন্যতম প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি এবং প্রশাসনের দায়িত্ব পালন—এ দুইয়ের মধ্যকার সমন্বয় বেশ চ্যালেঞ্জিং। ইআইইউ’র এই আন্দোলন প্রমাণ করে, শিক্ষার্থীদের অভিব্যক্তির জন্য একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করাই আজকের সময়ের সবচেয়ে জরুরি বিষয়।
ডিএমপি’র বার্তা স্পষ্ট যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সাধারণ জনগণের সুবিধার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দাবিও গুরুত্ব পাবে, তবে তা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে বাস্তবায়িত হওয়া জরুরি।
ইআইইউ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এই ঘটনাটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পুলিশের সমন্বয় ও সমঝোতার প্রয়োজনীয়তার এক স্পষ্ট দৃষ্টান্ত। ডিএমপির সদিচ্ছা ও শিক্ষার্থীদের দাবি যদি সঠিক পথে আলোচনা করে সমাধান করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে এই ধরনের সংঘাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। জনসাধারণের চলাচলের স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করাই ভবিষ্যৎ শান্তির চাবিকাঠি।