ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বহুদিনের দাম্পত্য বৈরিতা যেন এবার রূপ নিচ্ছে সরাসরি সামরিক সংঘাতে। গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া এই দ্বন্দ্বে একের পর এক প্রাণঘাতী হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সর্বশেষ ঘটনায়, ইসরায়েলের চালানো এক ভয়ঙ্কর বিমান হামলায় ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর খোররামাবাদে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
এই হামলার খবর নিশ্চিত করেছে ইরানের নিজস্ব সামরিক সূত্র এবং স্থানীয় গণমাধ্যম। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (IRGC) বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, নিহতদের মধ্যে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ইরানের প্রতিরক্ষা কাঠামোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এছাড়া, ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ এজেন্সি জানায়, শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই সামরিক অভিযান ও পাল্টা প্রতিরোধে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১৫ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।
এই তথ্য ইঙ্গিত দেয়, শুধুমাত্র একক হামলাই নয়, বরং ধারাবাহিক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে ইরান।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি ইসরায়েলের কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ, যার মাধ্যমে তারা ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক সক্ষমতাকে দুর্বল করতে চায়।
হামলার লক্ষ্য শুধুমাত্র সামরিক ঘাঁটিই নয়। ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, সামরিক সদর দপ্তর, এমনকি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশন ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোকেও আক্রমণ করেছে। এসব হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানী ও সিনিয়র সামরিক নেতা নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ইরানের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই আক্রমণ দেশটির সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামোতে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টি করতে পারে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতারা এ হামলাকে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে অভিহিত করেছেন।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেন,এই আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেবে ইরান। শত্রুদের রক্তে আগুন জ্বলবে।
এদিকে, ইসরায়েলও পাল্টা প্রতিরোধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি যদি কূটনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধের সূচনা হতে পারে, যার অভিঘাত পড়বে গোটা বিশ্বেই।জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে উভয় দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখনও সরাসরি অবস্থান না জানালেও, গোপনে ইসরায়েলের সামরিক সহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাসের বাজারে ইতিমধ্যে এই উত্তেজনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বিপুল জনজীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে – বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও ইউরোপে।
ইসরায়েলি হামলায় খোররামাবাদে প্রাণহানির ঘটনা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় — এটি এক বিস্ফোরক যুদ্ধের সূচনার ইঙ্গিত।
পরবর্তী ধাপে কী ঘটবে, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ওপর।
তবে একটি বিষয় স্পষ্ট — মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এখন ভয়ঙ্কর সঙ্কটে।