close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ই স রা য়ে লে র হা ম লা র সময় ই রা নে কী করছিলেন জেন-জিরা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলি হামলার সময় ঘরবন্দী ইরানিরা ভার্চ্যুয়াল জগতে খুঁজেছেন আশ্রয়। অনলাইনে বন্ধুতা, থেরাপি আর সংগঠনে তৈরি হয়েছে এক ‘ডিজিটাল প্রতিরোধ’—সেই গল্পই বলছে জেন-জিরার জীবন।..

১৩ জুন ইসরায়েলি হামলায় যখন কেঁপে উঠছে ইরানের রাজধানী তেহরান, তখন জীবন থমকে গিয়েছিল হাজারো তরুণ-তরুণীর। আতঙ্কে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন বাঙ্কারে নয়, বরং ইন্টারনেটের ভার্চ্যুয়াল জগতে। ঘরের বাইরে রকেট, ড্রোন আর বিস্ফোরণের শব্দ, আর ঘরের ভেতর এক অদৃশ্য যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই। সেই লড়াইয়ের নাম জেন-জিরা, আর অস্ত্র—ডিসকর্ড, হোয়াটসঅ্যাপ, VPN আর মনোবল।

২৪ বছর বয়সী মোমো, একজন আইটি শিক্ষার্থী, বলছিলেন, “আমরা জানি না পাশের ফ্ল্যাটটা সাধারণ কারও, নাকি সামরিক গোয়েন্দার। তবু তেহরান ছাড়িনি। আমার ঘরই যদি কবর হয়, তাও উদ্বাস্তু হয়ে বাঁচতে চাই না।”

এই কথাই যেন ইরানের একটি গোটা প্রজন্মের মনের কথা। তারা বেছে নিয়েছে নিজেদের শহরেই থেকে প্রতিরোধের পথ। হোক না সেটা ভার্চ্যুয়াল জগতে।

বিস্ফোরণের আওয়াজে ঘুম ভাঙা, বাড়ির ছাদ থেকে আগুন দেখা, শিশু বুকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা—এই বাস্তবতার মধ্যেই জেন-জিরার তরুণেরা গড়ে তুলেছিল ‘ডিজিটাল শেল্টার’।

সাত বছর ধরে ডিসকর্ড ব্যবহার করছেন মোমো। হামলার সময় পরিবার থেকেও বেশি সময় কাটতো তাঁর ভার্চ্যুয়াল বন্ধুদের সঙ্গে। কখনো সিনেমা দেখা, কখনো গেম খেলা, আবার কখনো অনলাইনে একসাথে ঘুমানো—সবই চলত বোমা হামলার মধ্যেও।

কল অব ডিউটি গেম খেলার সময়ই এক বিস্ফোরণে চমকে উঠেছিলেন ২৩ বছর বয়সী সামিন। প্রথমে বুঝতে পারেননি—বিস্ফোরণের আওয়াজটা গেম থেকে আসছে, না বাস্তব থেকে।

এই প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে সেন্সরশিপ, নিষেধাজ্ঞা আর নিপীড়নের মধ্য দিয়ে। কিন্তু অনলাইন তাদের দিয়েছে মুক্তির স্বাদ। সেখানেই তারা গড়ে তুলেছে সংযোগ, সহানুভূতি আর প্রতিরোধ।

শুধু তরুণ ছেলেরাই নয়, অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে খুঁজে পেয়েছেন আশ্রয়। এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ—‘Yoga for Pregnancy’—ছিল তেহরানের মায়েদের একমাত্র ভরসা। সেখানে তাঁরা শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল, ভয় কাটানোর উপায় আর ভয়ের মধ্যে শান্ত থাকার টিপস আদান-প্রদান করতেন।

জোহরা, একজন আট মাসের গর্ভবতী নারী বলেন, “বিস্ফোরণে ঘুম ভেঙে গেলে বন্ধুরা বলতো—শ্বাসে মনোযোগ দাও, গান চালাও, আবার ইয়োগা করে দেখো। এভাবেই বেঁচে ছিলাম।”

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইরানে নিষিদ্ধ হয় ডিসকর্ড। সরকার জানিয়েছিল, অশ্লীল কনটেন্ট বন্ধ করতে এই পদক্ষেপ। কিন্তু বাস্তবতাকে কেউ এড়িয়ে যেতে পারেনি। VPN, এনক্রিপটেড অ্যাপ আর সৃজনশীলতা দিয়েই জেন-জিরা চালিয়ে গেছে তাদের বৈপ্লবিক যোগাযোগ।

জেনারেশন জেডের প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ইরানি সদস্য—তারা গেমার, থিংকার, অ্যাক্টিভিস্ট। নিষেধাজ্ঞা বা বোমা—কিছুই থামাতে পারেনি তাদের ডিজিটাল যুদ্ধ।

১২ দিন ধরে চলা সংঘাতে কোনো সাইরেন বাজেনি, ছিল না কোনো সরকারি আশ্রয়। তবু ভার্চ্যুয়াল জগতে তারা তৈরি করেছে এমন এক আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে ছিল মনোবল, সহানুভূতি আর অবিচল সাহস।

জেন-জিরা প্রমাণ করেছে, যুদ্ধ শুধু অস্ত্রে হয় না—কিছু যুদ্ধ চলে চ্যাটরুমে, ভিডিও কলে, কিংবা একটা ভয়েস মেসেজে।

ইরানের এই তরুণ প্রজন্ম আমাদের দেখিয়ে দিল—যেখানে বোমা পড়ে, সেখানেও স্বপ্ন জাগে। যেখানে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, সেখানেই জন্ম নেয় এক নতুন প্রতিরোধ। আজকের পৃথিবীতে যুদ্ধ মানেই শুধু আগুন আর ধ্বংস নয়; যুদ্ধ মানেই সংযুক্তির নতুন ভাষা, এক অনলাইন বিপ্লব।

نظری یافت نشد


News Card Generator