close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ই রা নি ক্ষে প ণাস্ত্র হা ম লা য় দক্ষিণ ই স রা য়ে লে ব্যাপক ক্ষ য় ক্ষ তি, হাসপাতালে আ হ ত ১৩৭..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
শুক্রবার ভোরে দক্ষিণ ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আগুনে পুড়ে যায় ভবন, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামরিক ঘাঁটি ও হাসপাতাল। হামলায় আহত হয়েছে অন্তত ১৩৭ জন। যুদ্ধের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় বিশ্ব।..

দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন আর সামরিক উত্তেজনার পর অবশেষে ইরান সরাসরি প্রতিশোধে নেমেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (২০ জুন) ভোরবেলা, যখন অধিকাংশ মানুষ ঘুমে আচ্ছন্ন, তখনই রেড অ্যালার্ট সাইরেন বেজে ওঠে দক্ষিণ ইসরায়েলের আকাশে। এরপর মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আকাশ ছিন্ন করে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র গর্জে ওঠে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলার শব্দ ছিল যেন বজ্রপাতের মতো। আর তার পরপরই দেখা যায় আগুনের লেলিহান শিখা ও আকাশভর্তি কালো ধোঁয়া। ইসরায়েলের জাতীয় উদ্ধারকারী সংস্থা ‘মাগেন ডেভিড অ্যাডম’ এক্স (সাবেক টুইটার) এ হামলার পরপরই একটি ছবি প্রকাশ করে, যেখানে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে ওঠে— খোলা জায়গায় ছড়িয়ে পড়া আগুন এবং পাশের একাধিক ভবনে চরম ধ্বংসস্তূপ।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, হামলায় তেমন কোনও প্রাণহানি হয়নি। তবে পরবর্তী তথ্যে জানা যায়, আশপাশের একটি বেসামরিক হাসপাতাল সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় অন্তত ১৩৭ জন আহত হয়েছেন, যাদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ হামলা নিছক প্রতিক্রিয়া নয়— এটি ছিল সুপরিকল্পিত একটি সামরিক কৌশল। হামলার মূল লক্ষ্য ছিল বিয়ের শেভা শহরের আশেপাশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি, যেখানে ইসরায়েলের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও ড্রোন সিস্টেম স্থাপিত ছিল। কিন্তু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের একটি অংশ ‘ট্র্যাকিং বিভ্রাটে’ একটি বেসামরিক হাসপাতালে গিয়ে আঘাত হানে, যা এই হামলাকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।

ইরানের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি না দিলেও, ইরানের ঘনিষ্ঠ সামরিক চ্যানেলগুলোতে ইঙ্গিত মিলেছে, এটি ছিল ইসরায়েলের সাম্প্রতিক গাজা হামলার পাল্টা জবাব।

এই ভয়াবহ ঘটনার পর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য এখন আগুনের খুব কাছাকাছি। উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং চীন এই সংঘাত থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানালেও, ইসরায়েল স্পষ্ট জানিয়েছে— তারা এই হামলার ‘উপযুক্ত জবাব’ দেবে। ইতিমধ্যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী একটি জরুরি প্রেস কনফারেন্সে ঘোষণা দিয়েছেন, “ইরানের এই ধৃষ্টতা নিঃসন্দেহে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।”

বিশ্বের অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি শুধু ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে। বিশেষ করে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি বাহিনী এবং ইরাকের কিছু শিয়া মিলিশিয়াও ইরানের পক্ষ নিতে পারে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ালে সংঘাত রূপ নিতে পারে পূর্ণমাত্রার আঞ্চলিক যুদ্ধে।

সবচেয়ে করুণ অবস্থায় রয়েছে সাধারণ মানুষ। দক্ষিণ ইসরায়েলের বিয়ের শেভা শহর ও আশপাশের এলাকায় বহু মানুষ রাতেই ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। হাসপাতালের আঘাতপ্রাপ্ত অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১৩৭ জন আহতের মধ্যে ২৩ জন শিশু ও ৯ জন নারী রয়েছেন। অনেকে বলেছেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। কিন্তু আমাদের জীবন প্রতিদিন ঝুঁকির মধ্যে কাটছে।

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখান থেকে ফিরে আসা খুবই কঠিন। কূটনৈতিকভাবে শান্তির চেষ্টা চলছে ঠিকই, কিন্তু আকাশে যখন ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে, তখন শব্দের চেয়ে বেশি প্রতিধ্বনি তোলে আগুন আর ধ্বংস।

No comments found


News Card Generator