বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন — মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছাল যখন ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের ১৪তম দফার সামরিক অভিযান চালায়। তবে এবারকার হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে এমন এক ধরনের সুপরিকল্পিত ও বিপজ্জনক অস্ত্র, যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে রীতিমতো অকার্যকর করে দেয়।
ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, এদিন ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছিল সম্পূর্ণ নতুন মডেলের। এসব ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম এবং ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে একক উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। একই সঙ্গে আকাশে ওড়ানো হয় আত্মঘাতী ড্রোনের স্কোয়াড, যা হামলার সময় চূড়ান্ত বিভ্রান্তি ও চাপ সৃষ্টি করে।
সূত্র জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা — যার মধ্যে রয়েছে ‘ডেভিড স্লিং’, ‘প্যাট্রিয়ট’, এবং ‘আয়রন ডোম’ — এসবকে পাশ কাটিয়ে রাজধানী তেল আবিবের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সরাসরি আঘাত হানে। বিস্ফোরণের শব্দ এবং ধোঁয়ার কুন্ডলী দেখা গেছে গুশ দান অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হামলার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছে, ইরানের ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রটি ছিল বহু ওয়ারহেড সমৃদ্ধ। এটি মূলত একটি মূল ক্ষেপণাস্ত্র, যা নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে একাধিক সাব-ক্ষেপণাস্ত্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে — যার ফলে একাধিক জায়গায় একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। ইসরায়েলের আর্মি রেডিওর বরাতে জানা গেছে, গুশ দান এলাকাই ছিল এই জটিল প্রযুক্তির প্রধান লক্ষ্য।
এ ঘটনাকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী 'নতুন ও জটিল চ্যালেঞ্জ' হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারা জানিয়েছে, "এ ধরনের বহুমুখী ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার হুমকি তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল শুধু প্রতিশোধমূলক নয়, বরং একটি কৌশলগত বার্তা। অতীতে ইসরায়েল নানা সময়ে সিরিয়া ও ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, এমনকি ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের টার্গেট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবারকার হামলা ছিল এর পাল্টা জবাব, যেখানে ইরান দেখিয়েছে যে তারা শুধু প্রতিক্রিয়া দেখাতে নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে প্রতিরক্ষা ভেদ করতেও সক্ষম।
এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে যুদ্ধাবস্থার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জাতিসংঘ থেকেও শান্তির আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে একাধিক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, এ ধরনের "মাল্টিপল ওয়ারহেড মিসাইল" ব্যবহার শুধু ইসরায়েল নয়, গোটা অঞ্চলকেই অস্থিরতার মধ্যে ঠেলে দিতে পারে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের এই নতুন অধ্যায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক সমীকরণকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইরান এই হামলার মাধ্যমে তাদের সামরিক সক্ষমতার শক্ত বার্তা পাঠিয়েছে — আর ইসরায়েলের জন্য এটা এক অশনি সংকেত।



















