মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনার নতুন ঢেউ তুলেছে ইরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার জবাবে তেহরান সরাসরি পাল্টা হামলা চালায়, যা শুধু সামরিক দিক থেকেই নয়—রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকেও প্রভাব ফেলেছে বৈশ্বিক অঙ্গনে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সম্প্রতি তার ভেরিফায়েড ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিওটির সূচনাতেই তুলে ধরা হয় গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার ভয়াবহ দৃশ্য এবং সাধারণ মানুষের রক্তাক্ত করুণ পরিণতি। এরপর একে একে দেখানো হয়—ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলের ভেতরে কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে, কীভাবে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছে, এবং সেইসব দৃশ্য দেখে মানুষের উল্লাস।
এমন ক্ষেপণাস্ত্র, যা বিশ্বের সম্মানিত ও মর্যাদাবান মানুষদের আনন্দ দিয়েছে।
এই বাক্যটিই যেন পুরো মুসলিম বিশ্বের আবেগ ও ক্ষোভের প্রতিফলন—যারা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের ওপর চলা নির্যাতনের প্রতিবাদে মুখ খুলতে চেয়েছিল, কিন্তু নেতৃত্বের অভাবে দুর্বল ছিল। এবার খামেনির কণ্ঠ যেন সেই মৌন ক্ষোভকে ভাষা দিয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন, তা শুধু ইরানের বিরুদ্ধে নয় বরং পুরো অঞ্চলের মানুষের মর্যাদার ওপর সরাসরি আক্রমণ।
তিনি জানান, হিজবুল্লাহ যেকোনো মূল্যে ইরানের পাশে থাকবে এবং প্রতিরোধ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জবাব দিতে প্রস্তুত।
এদিকে হুমকির পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে কিছুটা সময় নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউজের এক উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনই সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত না নিয়ে কূটনৈতিক সমাধানের জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন।
এই অবস্থানে বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকা কৌশলে ইরানের প্রতিরোধের ক্ষমতা যাচাই করছে, কিন্তু খামেনির এই আত্মবিশ্বাসী বার্তা প্রমাণ করে দিয়েছে—তেহরান কোনোক্রমেই পশ্চাদপসরণে রাজি নয়।
বিশ্ব রাজনীতিতে এই ভিডিও বার্তার তাৎপর্য অনেক বড়। কারণ এটি শুধু একটি বার্তা নয়—একটি অবস্থান। বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনগণ, বিশেষ করে যারা ফিলিস্তিন ইস্যুতে চুপ ছিলেন, তারাও এখন সোচ্চার হচ্ছেন।
ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি একটি জনমত গড়ে তোলার কৌশল নিয়েছে। এর ফলে ইসরায়েল এখন কেবল সামরিক নয়, নৈতিক ও জনমতের যুদ্ধেও চাপের মুখে।
এই ভিডিও এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বিশ্বের অনেককে প্রশ্ন করতে বাধ্য করেছে—কে আগ্রাসী আর কে প্রতিরোধকারী? আয়াতুল্লাহ খামেনির এ ধরনের বার্তা প্রমাণ করে, বর্তমান বিশ্বে সত্য ও সাহসের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কেউ এখনো আছে।