ইরানকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক কূটনীতি। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের প্রেক্ষিতে এবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া, চীন এবং পাকিস্তান মিলে একটি গুরুত্বপূর্ণ খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে। যদিও এটি এখনও ভোটে যায়নি, কিন্তু এ নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তানের প্রস্তাবিত এই খসড়া এখনও আনুষ্ঠানিক ভোটাভুটির জন্য উপস্থাপন করা হয়নি, তবে পরিষদের সদস্যদের মধ্যে এটি বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এই প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে উঠতে পারে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেয়ার সম্ভাবনাও ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
প্রস্তাবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ইরানে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-র তত্ত্বাবধানে থাকা শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর উপর যেকোনো হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।
এ ধরনের হামলা কেবল ইরানকেই নয়, বরং গোটা পরমাণু নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
যদিও কোথাও সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের নাম লেখা হয়নি, তবুও প্রস্তাবের ভাষা এবং প্রেক্ষাপট বুঝিয়ে দিচ্ছে, মূল অভিযোগ কার বিরুদ্ধে।
এই খসড়ায় সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে যুদ্ধবিরতির আহ্বান। এতে বলা হয়েছে, অবিলম্বে এবং কোনো শর্ত ছাড়াই সবপক্ষকে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।
সেইসঙ্গে, সকল দেশকে কূটনৈতিক সমাধানের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান একযোগে এটিকে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রস্তাবে যেহেতু যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে কড়া অবস্থান নেওয়া হয়েছে এবং ইরানের পক্ষে বার্তা দেয়া হয়েছে— যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ করতে পারে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। ফলে, এমন কোনো প্রস্তাব যা ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে— সেটি পাশ হওয়া সহজ নয় বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।
এই প্রস্তাবের পরপরই নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ব। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ রাশিয়া-চীন-পাকিস্তানের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও পশ্চিমা জোটের বেশ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রস্তাব পাস হোক বা না হোক— এটি মধ্যপ্রাচ্য সংকটকে ঘিরে বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এতে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে যে, ইরানকে ঘিরে আগামি দিনে বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের রদবদল আসতে পারে।
ইরান, রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক তৎপরতায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে যুদ্ধবিরতি ও পারমাণবিক নিরাপত্তা। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বশক্তির এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথে যুক্তরাষ্ট্র কতটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতি আগামী দিনে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে—এমনটাই ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।