ই রা নে র হা ম লা য় ই স রায়েলের ক্ষতি কত, জানাল ব্লুমবার্গ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানি পাল্টা হামলায় ইসরায়েল আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। ব্লুমবার্গ জানায়, ভেঙে পড়েছে প্রতিরক্ষা ব্যূহ, ধ্বংস হয়েছে সামরিক ও বেসামরিক অবকাঠামো।..

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আগুন আবারও দাউদাউ করে জ্বলেছে। ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় কেঁপে উঠেছে পুরো ইসরায়েল। মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েল প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। শুধু ক্ষতি নয়—ইসরায়েলের সর্বাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গিয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে, ভেঙে পড়েছে দেশের নিরাপত্তার দেয়াল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে, ইরানের হামলায় সামরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোর উপর বিশাল ধাক্কা লেগেছে। রাডার এড়ানো বহু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের ভেতরে আঘাত হানে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও অর্থনীতি—দুটিই গভীরভাবে নাড়া খেয়েছে।

গত ১৩ জুন, ইসরায়েল ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও আবাসিক এলাকাগুলোতে একাধিক হামলা চালায়। এরই জবাবে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এয়ারোস্পেস ফোর্স ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ নামে ভয়ঙ্কর পাল্টা হামলা শুরু করে।

ইরান টানা ১২ দিন ধরে চালায় ২২ দফা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত। এতে অধিকৃত ফিলিস্তিনের বহু শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইসরায়েলের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। আতঙ্কে মানুষ শহর ছাড়তে শুরু করে। হাইওয়েতে, সাবওয়েতে ও রেলস্টেশনে দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

ব্লুমবার্গ বলছে, এই হামলার ফলে স্পষ্ট হয়ে গেছে—ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ইরানের আধুনিক হামলা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে একের পর এক বিস্ফোরণ হয়েছে। বৈদ্যুতিক গ্রিড, মিলিটারি কমান্ড সেন্টার এবং সরকারি ডেটা সেন্টারগুলোর বেশ কয়েকটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের আক্রমণ ইসরায়েলের প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিরক্ষা কৌশলের বড় ব্যর্থতা হিসেবেই ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় যখন ২২ জুন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নাতানজ, ফোরদোইসফাহান—এই তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে বিমান হামলা চালায়। এ ঘটনায় সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে পুরো অঞ্চলটি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৪ জুন যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। তবে সাময়িক শান্তির আবরণ থাকলেও, বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা—এই দ্বন্দ্বের রেশ দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এমন সামরিক প্রস্তুতি এবং টার্গেটেড আক্রমণ প্রমাণ করে দিয়েছে—তারা শুধু কৌশলগতভাবে নয়, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও অনেক অগ্রসর। অপরদিকে, ইসরায়েলের ‘অভেদ্য’ প্রতিরক্ষা ব্যূহ যে ফাঁপা বেলুনে পরিণত হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও স্বীকার করছেন।

এই যুদ্ধে ইসরায়েল শুধু মানবিক ও সামরিক ক্ষতির মুখে পড়েনি—বিনিয়োগ, রপ্তানি, ইন্স্যুরেন্স এবং সেনাবাহিনী রক্ষণাবেক্ষণে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিন বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি সরকারের বাজেট ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছে।

এই যুদ্ধ শুধু দুই দেশের যুদ্ধ নয়, এটি এক বৃহৎ ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতিচ্ছবি। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত দাপট ইসরায়েলকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। যুদ্ধ থামলেও, উত্তেজনার আগুন এখনো চাপা আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলছে।

Aucun commentaire trouvé


News Card Generator