ই রা নে যু ক্ত রা ষ্ট্রে র হা ম লা নিয়ে বি শ্ব নেতারা কী বলছেন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানে হঠাৎ মার্কিন হামলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিশ্ব। নেতারা একে ‘অবৈধ আগ্রাসন’ আখ্যা দিয়ে শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন। বাড়ছে যুদ্ধের শঙ্কা।..

মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে উঠল মধ্যপ্রাচ্য। গতকাল শনিবার রাতের পরপরই ইরানের তিনটি গোপন পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে তাক লাগিয়ে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে গেল মধ্যপ্রাচ্যের অগ্নিসংঘাতে। সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, আর বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া শুরু হয় একে একে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা কেবল একটি দেশকে নয়, গোটা অঞ্চলকে ভয়াবহ সংঘাতের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য— সর্বত্রই এই ইস্যুতে উঠছে শান্তির দাবি ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বার্তায় বলেছেন, তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ হামলাকে তিনি ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধির ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “এই সংঘাত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা সারা বিশ্বের জন্যই মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।”

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান উত্তেজনার মধ্যস্থতাকারী ওমান এই হামলার তীব্র সমালোচনা করেছে। দেশটি একে 'অবৈধ আগ্রাসন' বলে আখ্যায়িত করে বলেছে, “এই কর্মকাণ্ড পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।” ওমান দ্ব্যর্থহীনভাবে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, “ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে দেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সেই হুমকি কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছে।” তবে তিনি ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরতে ও সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন।

অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি স্পষ্ট হুমকি। তবে তারা যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধানেই আগ্রহী।

নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সামরিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমাদের দায়িত্ব এখন উত্তেজনা যেন না বাড়ে তা নিশ্চিত করা।

মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয় পক্ষকে যুদ্ধ নয়, কূটনৈতিক সংলাপে বসে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

চিলির প্রেসিডেন্ট গাব্রিয়েল বোরিক সামাজিক মাধ্যমে বলেন, “আন্তর্জাতিক আইনে এ হামলা অবৈধ। আমরা শান্তি চাই, শান্তি প্রয়োজন।”

টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ অযৌক্তিক, বিপজ্জনক এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গ করেছে।

বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরব ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে। দেশটি উত্তেজনা কমাতে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে এবং রাজনৈতিক সমাধানে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদারের তাগিদ দিয়েছে।

বিশ্বনেতাদের বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের এই হঠাৎ হামলা শুধুই একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নয়— এটি বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে চলেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে— এই উত্তেজনার আগুন কি বিশ্বযুদ্ধের রূপ নেবে, না কি কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তায় তা প্রশমিত হবে?

No comments found