ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক হামলার প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আরব লীগ, যা জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে ইরানের সার্বভৌমত্বের সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে আরব লীগের সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই হামলাকে পুরো অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তুরস্কের ইস্তানবুলে দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত একটি জরুরি বৈঠকে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একসঙ্গে ঘোষণা করেন, বর্তমান উত্তেজনা যেন আরও বৃদ্ধি না পায়, তার জন্য আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক স্তরে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ ও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার তাগিদ দেন।
ইস্তানবুলে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর ৫১তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। ওই বৈঠক থেকেই আরব লীগের এই কড়া বিবৃতি প্রকাশিত হলো। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের বিবৃতি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন দিক নির্দেশক হতে পারে। কারণ ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরে অঞ্চলটির স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করে আসছে।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা মনে করছেন, আরব লীগের এই যৌথ নিন্দা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আরব দেশগুলো এখন একটি বৃহত্তর কৌশল গ্রহণ করতে পারে, যার মাধ্যমে সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে।
ইসরায়েলের সামরিক হামলা ইরানের ওপর হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিপজ্জনকভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অঞ্চলে একাধিক সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে যা বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও প্রভাবিত করছে। আরব লীগ এই ধরণের আক্রমণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের শক্তিশালী আরব লীগ বিবৃতি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে চলা ইসরায়েল-ইরান বিরোধকে কূটনৈতিক মাধ্যমে মীমাংসার পথে নিয়ে আসার একটি বড় সঙ্কেত এটি। পাশাপাশি, বৈশ্বিক মহাশক্তিগুলোও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আঞ্চলিক দেশগুলো এখন আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আরও উদ্যোগ আশা করা যাচ্ছে। ওআইসি ও আরব লীগের যৌথ উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ অব্যাহত থাকবে।
ইসরায়েলের সামরিক হামলা এবং এর বিরুদ্ধে আরব লীগের তীব্র নিন্দা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে নতুন দিক নির্দেশ করছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংঘাত কমিয়ে স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান এতে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। আগামী দিনে এই সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকা কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।