close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ই রা ন কে আলোচনায় আনতে লোভনীয় প্রস্তাবের সিরিজ টোপ যু ক্তরাষ্ট্রের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনতে বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবসহ বৈঠক চালাচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত।..

ইরানকে আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এখন ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ব্যস্ত। ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে ইরানের শান্তিপূর্ণ বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা প্রস্তাব করেছে। এছাড়াও, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ এবং বিদেশে আটকে থাকা ইরানের ছয় বিলিয়ন ডলার মুক্তির মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসন ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চায়।

গত দুই সপ্তাহে ইরান-ইসরায়েল সামরিক সংঘাতের মাঝেও যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলো গোপনে আলোচনায় যুক্ত হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরেও এসব আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে হলেও একটি বিষয় স্পষ্ট—ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।

তেহরান এই শর্তের পক্ষে থাকলেও এটি বাস্তবায়ন কঠিন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মার্কিন হোয়াইট হাউসে ২০ জুন ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার ঠিক আগের দিন গোপন বৈঠকে এক নতুন প্রস্তাব গৃহীত হয়। এতে ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অর্থ দেবে না, বরং আরব মিত্র দেশগুলোকে অর্থায়নের দায়িত্ব দেয়া হবে।যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত হলো, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে এবং ইরান চাইলে বাইরে থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আমদানি করতে পারবে, কিন্তু নিজস্বভাবে সমৃদ্ধ করা যাবে না। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ সীমার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।

কাতারের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যবর্তী আলোচনা চলমান রয়েছে। বিশেষ সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির পেছনে কাতারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ভবিষ্যতে সংঘাত এড়াতে কাতার যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুদের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। মার্কিন প্রশাসন ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে মজুদ থাকার কথা বললেও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উপর মার্কিন হামলার ক্ষতি ও মজুদের পরিমাণ নিয়ে চলমান আলোচনা রয়েছে।

সম্প্রতি ইরান আইএইএ থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আইএইএ ছাড়ার পর ইরান পারমাণবিক কার্যক্রম আরও গোপনীয়তা বজায় রেখে চালিয়ে যেতে পারবে, যা এলাকায় উত্তেজনা বাড়াবে।লন্ডনে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসির কাছে গার্ডিয়ানের সিনিয়র প্রতিবেদক জুলিয়ান বার্গার বলেন, “ইরান টিকে গেছে, তার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা এখনও অক্ষুণ্ণ। তারা প্রায় ৪০০ কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম লুকিয়ে রেখেছে, যা দিয়ে ১০টি পরমাণু বোমা তৈরি সম্ভব।”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচনা করেছেন। পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গঠনমূলক ভূমিকা নিতে ইচ্ছুক।অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ স্বীকার করেছেন, তারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করতে চেয়েছিল, কিন্তু খুঁজে না পেয়ে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। তিনি বলেন, “যদি তাকে খুঁজে পেতাম, মেরে ফেলতাম।

এই সংবাদ থেকে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে শান্তিপূর্ণ পথে ফিরে আনতে ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নানা ধরনের কূটনৈতিক চাল চলাচ্ছে। তবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো জটিল ও অস্থির থেকে গেছে।যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা কাতারের মাধ্যমে আলোচনার মধ্য দিয়ে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করলেও ভবিষ্যতে এটি কতটা সফল হবে, সেটি সময়ই বলবে। ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি অর্জন এক বৃহৎ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে উদ্বেগ বিরাজ করছে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এসেছে। তেহরান বারবার বলেছে, তাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক কাজে সীমাবদ্ধ।ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলে রয়েছে। তবে এসব স্থাপনায় ইউরেনিয়ামের মজুদের প্রকৃত পরিমাণ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের সন্দেহ, এসব স্থাপনায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে এত ইউরেনিয়াম যা দিয়ে সামরিক পরমাণু অস্ত্র তৈরি সম্ভব।

সম্প্রতি, ইরানের পার্লামেন্ট ও সুপ্রিম কাউন্সিল আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও যাচাইকরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা কমে যাবে।বিশ্ব বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে ইরান চাইলে পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকে ঝুঁকতে পারে। বিশেষ করে যখন আইএইএ নজরদারি থেকে মুক্ত থাকবে, তখন এ ধরনের কাজ সম্পূর্ণ গোপনে সম্ভব হবে।

ইরানের এই অবস্থানের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থিতিশীল হতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি বৃদ্ধি পেলে প্রতিবেশী দেশগুলোও প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধির পথে হাঁটবে, যা অঞ্চলে নতুন বেগবান প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে।যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইসরায়েল-ইরানের দীর্ঘদিনের শত্রুতা কমানোর লক্ষ্যে পাকিস্তানকেও সহযোগিতায় টেনে আনছে। মার্কো রুবিও ও শেহবাজ শরিফের ফোনালাপে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক কৌশল মূলত তিন দিক থেকে কাজ করছে:
১) ইরানকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনা,
২) পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করা,
৩) অঞ্চলে নিরাপত্তা বজায় রাখা।

কাতারের মাধ্যমে মধ্যস্থতায় শান্তি প্রক্রিয়ায় গতি আনা হচ্ছে। তবে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস এখনও বড় বাধা হিসেবে রয়েছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির মধ্যেই তারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তবে পরিকল্পনা সফল হয়নি। খামেনি নিরাপত্তার জন্য গভীর বাংকারে ছিলেন এবং তারা তাঁকে খুঁজে পাননি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান আলোচনা এবং পারমাণবিক কর্মসূচির নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ইরানের আইএইএ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা বজায় রাখা এলাকায় নতুন সংকটের জন্ম দিচ্ছে।

No comments found


News Card Generator