মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা গতকালই নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যদিও ট্রাম্প দাবি করেছেন, দুই প্রতিবেশী দেশ যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে সম্মত হয়েছে, কিন্তু ইরান ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল হয়ে পড়েছে এবং ট্রাম্পের বক্তব্যের স্বচ্ছতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন ওঠেছে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা তীব্র আকার নেয়েছিল গত কয়েক সপ্তাহে। ট্রাম্প মঙ্গলবার (২৪ জুন) টুইট করে জানান, ইরান ও ইসরায়েল ছয় ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তার ভাষ্যমতে, এই সময়ে দুই পক্ষ শান্তিপূর্ণ আচরণ করবে এবং সংঘাত অবসান ঘটতে পারে। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য শান্তি কামনা করেন।
তবে, ইরান পরোক্ষভাবে জানিয়েছে তারা এখনো কোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পায়নি এবং এ ধরণের প্রস্তাবের প্রয়োজনও নেই। একই সঙ্গে, ইসরায়েলও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দিনে ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ চালানো হয়েছে। এতে ইসরায়েলে অন্তত তিনজন নিহত এবং একটি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে বড় প্রতিবন্ধকতা এখনও রয়ে গেছে। সাবেক মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তা নেড প্রাইস তার একাধিক সামাজিক মাধ্যমে পোস্টে ট্রাম্পের এই যুদ্ধবিরতিকে অস্থায়ী এবং অপ্রতুল সমাধান হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিই ছিল সবচেয়ে কার্যকর উপায় ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে। ২০১৮ সালে ট্রাম্প ওই চুক্তি বাতিল করে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন করে তুলেছেন।
নেড প্রাইস আরও বলেন, যুদ্ধবিরতি সফল হতে চাইলে এটি ইরানকে স্থায়ীভাবে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে হবে। যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তা হলে ইরান দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে হাঁটতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে দেশটির অভ্যন্তরে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচকরা মনে করেন, যুদ্ধবিরতির পেছনে স্পষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদী কূটনৈতিক পরিকল্পনা নেই। অনেকেই ইঙ্গিত দেন, এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রচারের অংশ মাত্র।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ফেরাতে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, তা এখনই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের উত্তেজনা যেন পুরো বিশ্বকে নতুন সংকটের মুখে ফেলতে পারে — এই আশঙ্কাই প্রবল হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তীব্র গোলাগুলির মধ্যে সাধারণ মানুষ জীবন যুদ্ধে লিপ্ত। যুদ্ধবিরতি না মেনে দুই পক্ষের উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ক্রমেই অস্থিতিশীল হচ্ছে।