মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে আবারও যুদ্ধের গন্ধ। প্রতিশোধের আগুনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক। সম্প্রতি ইসরায়েলের বিমান হামলার জবাবে ইরান একযোগে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। শনিবার (১৪ জুন) ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ জন নিহত এবং অন্তত ৭০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই হামলার পর ইরান রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দিয়েছে—এই প্রতিশোধের যাত্রা এখানেই শেষ নয়। বরং এটি হচ্ছে আরও বড় প্রতিক্রিয়ার সূচনা মাত্র। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলের আগের হামলার জবাবে শুরু হওয়া এই পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত থাকবে।
ফার্স তাদের প্রতিবেদনে ইরানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বরাত দিয়ে জানায়, ভবিষ্যতে ইরান শুধু ইসরায়েলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তারা ওই অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিকেও হামলার লক্ষ্যে পরিণত করতে পারে।
মূলত শুক্রবার রাতে ইসরায়েল ভয়াবহ এক বিমান হামলা চালায় ইরানের উপর। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের সামরিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ কেন্দ্র, ইউরেনিয়াম মজুদের গুদাম এবং বেশ কিছু বিমানবন্দরে একযোগে হামলা চালিয়েছে। এই অভিযানে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের (IRGC) অন্তত ২০ জন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন বলেও দাবি করে ইসরায়েল।
ইরান এই হামলাকে ‘যুদ্ধের উসকানি’ হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মহলে অভিযোগ তুলেছে। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন এবং তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলও জানিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে তাদের সামরিক অভিযান চালু থাকবে। এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ নেই বরং যুদ্ধের সম্ভাবনা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা দেশজুড়ে সতর্কতা জারি করেছে এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ পর্যায়ে তৎপর রয়েছে।
অন্যদিকে ইরান নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ইউনিটগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তেহরান শহরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। ইরান সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেওয়া না হলেও হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সংঘর্ষ থামানোর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই উত্তেজনা আরও বাড়ে, তবে এটি কেবল ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাতে তেল বাজার, বৈশ্বিক নিরাপত্তা, এবং ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে।