ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের শান্তি বৈঠকে বাধা দিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে দখলদার ইসরায়েল। রোববার (১ জুন) পশ্চিমতীরের রামাল্লায় অনুষ্ঠেয় গুরুত্বপূর্ণ এক কূটনৈতিক বৈঠক বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ ইসরায়েলকে সরাসরি ‘উগ্রবাদী’ আখ্যা দেন এবং তাদের শান্তি প্রচেষ্টাকে অস্বীকারকারী শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন।
আরব কূটনীতিকদের বৈঠক আটকাল ইসরায়েল
মূলত ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের আলোচনা করতে যাচ্ছিলেন সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল পশ্চিমতীরের রামাল্লায়। তবে ইসরায়েল তাদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়ায়, জর্ডানের রাজধানী আম্মানে বিকল্পভাবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
যদি ওই বৈঠক রামাল্লায় অনুষ্ঠিত হতো, তাহলে এটি হতো ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর সৌদি কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম পশ্চিমতীর সফর।
ইসরায়েলের শান্তি অস্বীকৃতি: দ্বিগুণ হবে কূটনৈতিক চাপ
বৈঠকের পর দেওয়া বিবৃতিতে প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেন, “ইসরায়েলের এই নিষেধাজ্ঞামূলক পদক্ষেপ তাদের উগ্র মনোভাব এবং সমস্যা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানে অনিচ্ছার সুস্পষ্ট প্রমাণ।” তিনি আরও বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু যদি ইসরায়েল এই প্রচেষ্টাকে বারবার বাধা দেয়, তাহলে কূটনৈতিক চাপ আরও জোরালো হবে।”
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক পরিসরে ইসরায়েলের প্রকৃত নীতিমালাকে নগ্ন করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে আলোচনা থামিয়ে দিলো তেলআবিব
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানান, আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ওই বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে আলোচনা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। আর এ কারণেই বৈঠকটি রুখে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, "এই আলোচনা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক সমর্থনের ভিত্তি দিতে পারত, যা ইসরায়েলের জন্য অস্বস্তির কারণ।"
১৯৬৭ সালের দখলের উত্তরাধিকার ও বর্তমান নিষেধাজ্ঞা
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিমতীর দখল করে নেয় ইসরায়েল। এর পর থেকে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যেকোনো কার্যক্রম ইসরায়েলের পূর্বানুমতির ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়ে থাকে।
আরব দেশগুলোর মন্ত্রীরা জর্ডান থেকে হেলিকপ্টারে করে পশ্চিমতীরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ইসরায়েল সেই আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়ায় পশ্চিমতীর সফর বাতিল করে তাদের জর্ডানেই বৈঠক করতে হয়।
বিস্তৃত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য সংকট
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে আসে, ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির যে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে, তা ইসরায়েলের একতরফা নীতির কারণে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বরং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথকে জটিল ও সংঘাতময় করে তোলা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবের মতো রক্ষণশীল এবং কূটনৈতিকভাবে সংযত একটি দেশের পক্ষ থেকে সরাসরি “উগ্রবাদী” শব্দটি ব্যবহার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটি প্রমাণ করে, মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ কূটনৈতিক চাপ তৈরির দিকে এগোচ্ছে।
এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরোধমূলক নীতি ও আরব বিশ্বের পাল্টা প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতের শান্তি প্রচেষ্টায় কী প্রভাব ফেলবে — তা সময়ই বলে দেবে।



















