close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

হঠাৎ রাজনীতির মাঠে গরম হাওয়া: নির্বাচন বা সংস্কার—কী আসছে?..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকাল ৯ মাসে প্রবাহিত হচ্ছে। সংস্কার ও নির্বাচনের টাইমফ্রেম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গভীর মতপার্থক্য। আজ, বিএনপি সরক..

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে এক নতুন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং এর পর গঠিত হয় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের কার্যকাল এখন আট মাস পার হয়ে ৯ মাসে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগোল এবং কবে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো স্পষ্ট নয়। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচনের টাইমফ্রেম নিয়ে মতপার্থক্য ক্রমশ বাড়ছে।

আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হওয়ার কথা, যেখানে বিএনপি নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়ে সরকারের অবস্থান জানার চেষ্টা করবে। এর পর তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণ করবে এবং প্রয়োজন হলে আন্দোলনে নামার ইঙ্গিতও দিয়েছে।

এদিকে, বিএনপির মিত্র দলগুলোও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে কথা বলছে। জামায়াতে ইসলামী, যা সাধারণত সরকারের পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিত, সে পক্ষ থেকে নির্বাচন চাওয়া হলেও সংস্কারের দাবী উঠেছে। আর এই আন্দোলনের নতুন দল, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যা জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তাদেরও দাবি—সংস্কারের আগে নির্বাচন সম্ভব নয়।

এছাড়া, এই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখন একটি বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে। গত শনিবার, সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মন্তব্য করেন, ‘‘আমরা অনির্বাচিত, এই কথা কে বলল? আমরা তো জনগণের দ্বারা নির্বাচিত।’’ অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘‘রাস্তা থেকে আমাকে বলতেছে, আপনারা আরো পাঁচ বছর থাকেন।’’

এতে রাজনৈতিক আলোচনায় বাড়তি উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকারের মেয়াদ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ আরও গম্ভীর হতে পারে।

নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে বিভ্রান্তি
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস গত শনিবার জানিয়েছিলেন যে, ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। তবে, পরবর্তীতে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই সময়সীমা সংশোধন করে জানানো হয়, নির্বাচন হতে পারে ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে।

এখনো নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতকাল, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, তারা কাগজ এবং অন্যান্য মুদ্রণ কাজ শুরু করেছে এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চায়।

বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রতিক্রিয়া
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংস্কারের কথা বলছেন, তবে নির্বাচনের সময় নিয়ে দলের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘যারা বলছে আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন, তারা বাস্তবে বিপরীত কাজ করছে।’’ তার মতে, ‘‘নির্বাচন ও সংস্কার একসাথে চলতে পারে, তবে নির্বাচনের সময়মতো হওয়া জরুরি।’’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘‘বিএনপি নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়ছে, যার ফলে নির্বাচনের রোডম্যাপ স্পষ্ট হওয়া জরুরি।’’

জামায়াতের অবস্থান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, ‘‘আমরা চাই নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে হোক, যেখানে জনগণ তাদের প্রতিনিধি স্বাধীনভাবে নির্বাচন করতে পারে।’’ জামায়াত বর্তমান সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার বিপক্ষে।

এনসিপি ও বাম দলগুলোর অবস্থান
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংস্কারের পরে নির্বাচন চায়, তবে দলের নেতাদের কিছু বক্তব্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে বলা হয়েছে—ড. ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে এটি ‘ব্যক্তিগত বক্তব্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাম দলগুলোও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় জানিয়েছিলেন, তাই সময়মতো নির্বাচন হওয়ার কথা।’’

শেষ কথা
রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বেড়েই চলেছে, এবং দেশে সম্ভাব্য নতুন মেরুকরণ দেখা যেতে পারে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, এবং অন্যান্য দলগুলি বিভিন্ন দাবিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, এবং সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও জটিল হচ্ছে। নির্বাচনের সময় এবং সংস্কারের পরিমাণ নিয়ে যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে, তা দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনী পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সামনে কী ঘটবে, তা একেবারে নির্ধারণ হতে বাকি—তবে যেকোনো সিদ্ধান্তই দেশের রাজনীতির গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।

Nessun commento trovato