যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতে হোয়াইট হাউজে এক আকস্মিক বৈঠকের ডাক দিয়েছেন। জাতীয় নিরাপত্তা দলের সদস্যদের নিয়ে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় হোয়াইট হাউজের ‘সিচুয়েশন রুমে’। বৈঠকটির সময় ও সিদ্ধান্ত নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সরকারিভাবে কিছু না জানানো হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র কৌতূহল ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী উত্তেজনার মধ্যে, ট্রাম্প কানাডার জি-৭ সম্মেলন মাঝপথে ছেড়ে তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরে এই বৈঠকের আয়োজন করেন। এই ধরনের আচরণ সাধারণত তখনই দেখা যায়, যখন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কোনো নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয় অথবা সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের আচরণ এবং আকস্মিক বৈঠক ডাকা ইঙ্গিত দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য বড় ধরনের সংঘাতের। বিশেষ করে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে উত্তেজনা বাড়ছে, তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এরই মধ্যে ট্রাম্প একটি বিস্ফোরক বিবৃতিতে তেহরানের সাধারণ বাসিন্দাদের শহর ত্যাগ করতে বলেন— যা সরাসরি সম্ভাব্য সামরিক হামলার পূর্বাভাস বলে ধরে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা যে কোনো সময় দখলদার ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের সামরিক আঘাত হানতে পারে। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এবং গোপন সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে তারা নিজেদের "সক্রিয় প্রতিরক্ষা" অবস্থানে রেখেছে।
তাদের দাবি, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোকে ধ্বংস করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের নীরব সমর্থন দিচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, ইরান মনে করছে সরাসরি প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
যদিও ট্রাম্পের প্রশাসন আগে থেকেই ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে, তবে এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মার্কিন কংগ্রেসের অন্তত আটজন সিনেটর ইতোমধ্যেই এই সম্ভাব্য যুদ্ধের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছেন। তাদের ভাষায়, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে আরেকটি যুদ্ধ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নয়, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকেও ভেঙে দেবে।
এদিকে, হোয়াইট হাউজে টানা কয়েক ঘণ্টার বৈঠকের পর কোনো প্রেস ব্রিফিং না দেওয়াও উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। সিচুয়েশন রুমে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সাধারণত তখনই হয়, যখন প্রেসিডেন্ট সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
বিশ্ব সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগে পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত সবাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে। যদি ইরান-ইসরায়েল সরাসরি যুদ্ধে জড়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্র এতে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে এটি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য একটি মারাত্মক সংকট ডেকে আনবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়ানোই একমাত্র উপায়, যাতে করে সংকট প্রশমিত করা যায়। তবে ট্রাম্পের এই আচরণ এবং হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরে ঘনঘন বৈঠক সংকটময় সময়ের ইঙ্গিতই দিচ্ছে।