বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ‘হজ ২০২৫’ উপলক্ষে পবিত্র নগরী মক্কায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সৌদি সরকার মোতায়েন করেছে ৪০ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী। রোববার (২ জুন) দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সৌদের তত্ত্বাবধানে এক কুচকাওয়াজ ও সামরিক মহড়ার মাধ্যমে এই ব্যাপক প্রস্তুতির চিত্র জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়। গালফ নিউজের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতি বছর হজ মৌসুমে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ এবং আরাফাত ময়দানে সমবেত হন। এই বিশাল সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৌদি সরকারকে নিতে হয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি। এবারের মহড়ায় অংশগ্রহণকারী বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে আকাশপথে টহল, বিশেষ বাহিনীর কৌশলগত অপারেশন এবং জরুরি মুহূর্তে দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।
প্রতিরোধে নয়, প্রতিরক্ষায় প্রস্তুতি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বলেন, “৪০ হাজারের বেশি নিরাপত্তা কর্মী এবারের হজ নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। তাদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও মনোবল এমন পর্যায়ে রাখা হয়েছে, যেন কোনো ধরনের সংকট মুহূর্তেও তারা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।”
এ মহড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল হজের আগে বাহিনীর প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা এবং যেকোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলায় তাদের সক্ষমতা নিশ্চিত করা।
প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার
দেশটির পাবলিক সিকিউরিটি বিভাগের মহাপরিচালক ও হজ নিরাপত্তা কমিটির চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আল বাসামি বলেছেন, “হজ নিরাপত্তা আমাদের কাছে ‘রেড লাইন’। আল্লাহর অতিথিদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে এমন যে কোনো কিছু মোকাবেলায় আমরা সর্বোচ্চ দৃঢ়তা ও প্রস্তুতি নিয়ে আছি।”
তিনি আরও জানান, এবারকার হজ ব্যবস্থাপনায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। এর মধ্যে রয়েছে ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম, ড্রোন পর্যবেক্ষণ এবং স্মার্ট মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম।
হজ ব্যবস্থাপনায় নতুন দৃষ্টান্ত
মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে হাজিদের অবাধ চলাচল এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পরিবহন ও স্বেচ্ছাসেবী দলগুলোকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
সামরিক মহড়া এবং কৌশলগত প্রদর্শনী শুধুমাত্র একটি নিরাপত্তা অনুশীলন নয়, বরং এটি সৌদি আরবের জাতীয় সংকল্পের প্রতীক বলেও বিবেচিত হচ্ছে। রাজতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় এই বিশাল আয়োজন দেশটির প্রশাসনিক দক্ষতা এবং ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের প্রতিচ্ছবি।
সৌদি আরবের আস্থা ও বার্তা
এই প্রদর্শনী ও প্রস্তুতি কার্যক্রমের মাধ্যমে সৌদি সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মুসলিম উম্মাহকে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে—হজ শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জও, যেটি পূর্ণ সচেতনতায় মোকাবেলা করা হচ্ছে।
প্রতিবারের মতো এবারও সৌদি কর্তৃপক্ষ আশা করছে, হাজিরা যেন নির্বিঘ্নে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ও পূর্ণ আস্থা নিয়ে তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি সম্পন্ন করতে পারেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা, অঙ্গীকার ও আধুনিক প্রযুক্তি হজ ২০২৫-কে সফল ও স্মরণীয় করে রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।



















