বগুড়ার এক ছোট্ট গ্রামের নিস্তব্ধ রাত। রাত তখন তিনটা। যমুনা নদীর তীরে বন্ধুর বাড়িতে নিঃসঙ্গ সময় কাটাচ্ছিলেন দেশের আলোচিত ইউটিউবার ও সংগীতশিল্পী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। আর সেই রাতেই ঘটে গেল এমন একটি ঘটনা, যা মুহূর্তেই শোক ও চমকে ভাসিয়ে দেয় গোটা দেশকে।
হিরো আলম আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন— এই খবরটি সকাল হতেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। হুহু করে বাড়তে থাকে উদ্বেগ আর কৌতূহল। তখনই শুরু হয় নাটকীয় এক মোড়— আলমের বিচ্ছিন্ন স্ত্রী রিয়ামনি সব কাজ ফেলে ছুটে যান বগুড়ার দিকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি গ্রামে তার পুরোনো বন্ধু নাট্যকার জাহিদ হাসান সাগরের বাড়িতে যান হিরো আলম। সেখানে বসে দীর্ঘক্ষণ রিয়ামনিকে ঘিরে আলাপ চলে দুই বন্ধুর মধ্যে। দুজনই পরে আলাদা বিছানায় ঘুমাতে যান।
কিন্তু সকালে ঘটে সেই ভয়াবহ দৃশ্য— জাহিদ দেখেন, হিরো আলম কোনো সাড়া দিচ্ছেন না। ঘরের ভেতরে বালিশের পাশে পড়ে রয়েছে ঘুমের ওষুধ। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে ভর্তি করা হয় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এদিকে স্ত্রীর মতো আগেই পাওয়া যায়নি এমন প্রতিক্রিয়া। হিরো আলমের এই দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়ান তার স্ত্রী রিয়ামনি। তিনি এসে শুধু পাশে দাঁড়াননি, নিজের ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাসে লিখেছেন .
“সম্পর্ক গড়ে তুলতে যেমন সময় লাগে, সম্পর্ক ভেঙে দিতেও তেমন সময় লাগে। সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুজনের মতে আর ভেঙে যায় তৃতীয় পক্ষের কারণে।
এই স্ট্যাটাসের সঙ্গে রিয়ামনি পোস্ট করেছেন হিরো আলমকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরা কয়েকটি ছবি, যেখানে দেখা যায় দুজনেই আবেগতাড়িত, কণ্ঠরোধী নীরবতা যেন বলে দিচ্ছে সব কিছু।
রিয়ামনি জাগো নিউজকে বলেন, “বগুড়ায় এসে ওর (হিরো আলম) সবকিছু জানলাম। এখন ওকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। ভালো একটা হাসপাতালে ওর চিকিৎসা করাতে চাই।
তিনি আরও বলেন, “সকালেই যখন এ খবরটা পেলাম, তখন দেরি না করে গাড়ি নিয়ে রওনা হয়ে যাই। শুনেছি ওর বন্ধু জাহিদের বাড়িতে ছিল। পরে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই হিরো আলম ও রিয়ামনির সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল। কেউ সরাসরি স্বীকার না করলেও, পারস্পরিক দোষারোপ ও ভুল বোঝাবুঝি ধীরে ধীরে সম্পর্ককে ভঙ্গুর করে তোলে। তবে এবার স্ত্রীর এই আবেগপূর্ণ ফিরে আসা— এক নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে।
নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, “হয়তো এই একটি ঘটনা আবার তাদের এক করে দিতে পারে। ভালোবাসা যদি সত্যি থাকে, তা ফিরে আসবেই।
বিনোদন দুনিয়ার রঙিন মুখ হিরো আলমের জীবনে যে অন্ধকার নেমে এসেছিল, সেখানে নতুন আলো দেখিয়েছেন তার স্ত্রী রিয়ামনি। হয়তো এই ভালোবাসার পরশই ফিরিয়ে আনবে নতুন একটি জীবন, নতুন একটি অধ্যায়। এ মুহূর্তে দেশবাসীর একটাই কামনা— আলম বেঁচে থাকুক, ভালো থাকুক, আর সম্পর্ক হোক সুস্থ ও সুন্দর।