close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

হেফাজত নেতার ঘরে হামলা ও মারধরের অভিযোগ, কাঠগড়ায় ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নেত্রকোনায় এক হেফাজত নেতা মাদ্রাসা সুপারের পক্ষে কথা বলায় তার বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতির বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজি ও ক্ষমতা দ্বন্দ্ব ঘিরে এই ঘটনার জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।..

নেত্রকোনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা: হেফাজত নেতার বাড়িতে হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত বিএনপি সভাপতি

নেত্রকোনা সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে হেফাজতে ইসলামের এক নেতার বাড়িতে হামলা ও মারধরের ঘটনায়। অভিযোগের তীর স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ রেনু মিয়ার দিকে, যিনি একই এলাকার আমলী মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হিসেবেও কর্মরত।

ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, ছোট গরদী এলাকার গরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবদুল খালেক খানের ওপর সম্প্রতি একটি হামলা ঘটে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতা আনিসুর রহমান বক্তব্য রাখেন। এরপর সন্ধ্যায় তার বাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।

আনিসুর রহমান শুধু মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র নন, তিনি হেফাজতে ইসলামের মৌগাতি ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বড় গরদী বাগানবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম। অভিযোগ রয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা আবুল কালাম তার ছেলে ও সমর্থকদের নিয়ে আনিসুরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং তাকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহত আনিসুর রহমানকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শুরু কোথায়?—চাঁদার দাবিকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব

সূত্র বলছে, গরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে শুরু হয় মূল দ্বন্দ্ব। আবুল কালাম আজাদ মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু তার পছন্দনীয় সিদ্ধান্ত গৃহীত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি নিজেই মাদ্রাসায় প্রবেশ করে সুপার আবদুল খালেককে তার কক্ষ থেকে টেনে বের করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সুপার আবদুল খালেক খান গণমাধ্যমকে জানান, আবুল কালাম তাকে নিয়মিত চাপ দিচ্ছিলেন যেন তাকে সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়। তিনি বলেন, “চাঁদা না দেওয়ায় আমাকে মারধর করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন, থানা এবং অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েছি।”

বিক্ষোভ ও পাল্টা মানববন্ধন

বুধবার দুপুরে সুপারের ওপর হামলার প্রতিবাদে এলাকাবাসী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। হেফাজত নেতা আনিসুর রহমান সেখানে বক্তব্য রাখেন এবং পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই ঘটে হামলার ঘটনাটি।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার মৌগাতি ইউনিয়নের হাটকলা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে হেফাজতে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন নেতৃবৃন্দ। জেলা সেক্রেটারি আসাদুর রহমান বলেন, “এটি আলেম সমাজের ওপর সুপরিকল্পিত আক্রমণ। যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা না করা হয়, তবে কঠোর আন্দোলনে যাওয়া হবে।”

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে আবুল কালাম আজাদ ও তার সমর্থকরা হাটখলা বাজারে পাল্টা মানববন্ধন করে। সেখানে আবুল কালাম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সুপারকে মারধরের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আনিসুর নিজেই তার বাড়িঘরে ভাঙচুর করেছে।”

বিএনপির অবস্থান ও তদন্ত কমিটি গঠন

বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপিও নড়েচড়ে বসেছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মো. আনোয়ারুল হক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে দলীয়ভাবে তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর নেতৃত্বে আছেন যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুর রহমান পাঠান।

কমিটির সদস্য এসএম মনিরুজ্জামান দুদু জানান, “তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে মাঠে কাজ শুরু হয়েছে।”

পুলিশ বলছে তদন্ত চলছে

নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, “মানববন্ধনের বক্তব্য ও মাদ্রাসায় সুপারকে লাঞ্ছিত করার জেরে হামলার ঘটনাটি তদন্তাধীন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।”


এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মৌগাতি ইউনিয়নজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়ভাবে অনেকে মনে করছেন, মাদ্রাসা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এখন রূপ নিয়েছে রাজনৈতিক হিংসায়। সাধারণ মানুষ অপেক্ষায় আছেন, সত্য উদঘাটন এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হয় কি না।

Nema komentara


News Card Generator