নারীর প্রতি বিদ্বেষ নয়, বরং ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানোর বার্তা নিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ফের সরব। সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান জোর দিয়ে বলেন, “হেফাজত ইসলাম নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাষ্ট্র যদি তাদের ন্যায্য অধিকার দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই দায়িত্ব আমরা নেব।”
তিনি এ বক্তব্য দেন শুক্রবার, ২৩ মে, জুমার নামাজ শেষে রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে।
এই কর্মসূচির মূল দাবি ছিল— নারী সংস্কার কমিশন বাতিল, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, জুলাই মাসে অন্যান্য সময়কার মত গণহত্যার বিচার, ফিলিস্তিন ও ভারতের মুসলিম নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার।
সমাবেশে অগ্নিগর্ভ হুঁশিয়ারি: সময় বেঁধে দিল হেফাজত
সমাবেশে বক্তারা সাফ জানিয়ে দেন, “আগামী জুন মাসের মধ্যে যদি আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব।”
তারা বলেন, “২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও পরবর্তী নানা দমন-পীড়নের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”
‘জুলাইয়ের চেতনায়’ রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক
সমাবেশে বক্তারা দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক বিভাজন দূর করে একটি জাতীয় ঐক্য গঠনের আহ্বান জানান। তারা বলেন, “সব রাজনৈতিক দলকে দেশের স্বার্থে জুলাইয়ের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিভেদের রাজনীতি দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
নির্বাচন ইস্যুতে সরাসরি হস্তক্ষেপের বার্তা
সমাবেশে হেফাজত নেতা আরও দাবি করেন, দেশের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। তারা বলেন, “একটি সুসংগঠিত রোডম্যাপ চাই যা নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার নিশ্চিত করবে।”
এছাড়া বিস্ময়করভাবে, তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেন এবং ঘোষণা দেন— “নির্বাচনকালীন সময় পর্যন্ত আমরা ড. ইউনূসকেই ক্ষমতায় দেখতে চাই।”
বিএনপি-জামায়াতকে সামনে আনার আহ্বান
সমাবেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বিএনপি ও জামায়াতের প্রতি বিশেষ আহ্বান। বক্তারা বলেন, “যারা ফ্যাসিবাদের দোসর, তারা আজ ঐক্য বিনষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এ অবস্থায় বিএনপি ও জামায়াতের দায়িত্ব আরও বেশি। তাদেরকে সামনে আসতে হবে, নেতৃত্ব দিতে হবে।”
বিশ্লেষণ: হেফাজতের এই বার্তা কী রাজনৈতিক পালাবদলের ইঙ্গিত?
হেফাজতে ইসলাম ঐতিহ্যগতভাবে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার কথা বললেও সাম্প্রতিক সময়ের বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। বিশেষ করে নারী সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে অবস্থান, নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবি এবং ড. ইউনূসের প্রতি সমর্থন— সবই ইঙ্গিত দেয় যে হেফাজতের রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে।
হেফাজতে ইসলামের নতুন কণ্ঠস্বর নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। নারীর অধিকার, রাজনৈতিক সংস্কার, আন্তর্জাতিক ইস্যু— সবকিছুতে একযোগে অবস্থান নিয়ে তারা রাজনীতির মাঠে পুনরায় দৃশ্যমান হওয়ার চেষ্টা করছে। জুন মাসই হয়তো নির্ধারণ করবে, এই বার্তা শুধুই প্রতীকী, নাকি সামনে আসছে আরও বড় কিছু।