হাসিনার ভুলেই সব শেষ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরও আওয়ামী লীগের টিকে থাকার ক্ষীণ সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গেল শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত, উসকানি ও ভারত থেকে পরিচালিত ষড়যন্ত্রের কারণে। অন্তর্বর্তী সরকার দলটির সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ক..

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক পরিণতি—প্রায় সাত দশকের প্রভাবশালী দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
চব্বিশ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের বেঁচে থাকার যে ক্ষীণ সুযোগ ছিল, তাও শেষ হয়ে গেছে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার অদূরদর্শিতা ও প্রতিবিপ্লবের আহ্বানের কারণে।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ক্ষমতালিপ্সা, একনায়কতান্ত্রিক আচরণ এবং ভারত থেকে দলে উসকানি চালানোর অপচেষ্টাই আওয়ামী লীগকে এই নিষ্ঠুর পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

৫ আগস্ট, গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও দেশের ভেতরে ফেলে যাওয়া দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য কোনো কার্যকর সুরক্ষা বা রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেননি।
বরং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ভারতের মাটিতে বসেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করতে দলের কর্মীদের উসকানি দিয়েছেন, প্রতিবিপ্লব ঘটাতে চেয়েছেন, যার ফলে অনেকে কারাবরণ করেছেন, অনেকে আবার গা ঢাকা দিয়েছেন।
এই অবস্থায় শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয় এবং নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে, যেখানে রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠনকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান রাখা হয়েছে।
নতুন এই আইন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো এখন বিচারাধীন অবস্থায় নিষিদ্ধ ঘোষিত হলো। দলটির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হতে যাচ্ছে।

প্রবীণ আইনজ্ঞ ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনা দল ও দেশ দুটোই চালিয়েছেন একনায়কতান্ত্রিকভাবে। ফলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে তাকে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। এখন তার অপরাধের দায় দলটিকে বহন করতে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজের ভুলের জন্য অনুশোচনাহীন; বরং তিনি দেশ অস্থিতিশীল করে তুলতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতে বসেই।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “গণহত্যার বিচারই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।”
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার অপরাধই আওয়ামী লীগের মৃত্যু ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, “ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছেন আর দলটিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি বলেন, “শেখ হাসিনা অনুতপ্ত না হয়ে বৈদেশিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তার কর্মকাণ্ডেই সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে, যার ফলাফলই আজকের নিষেধাজ্ঞা।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ-উর রহমান মনে করেন, “শেখ হাসিনার ভুল রাজনীতি ও অন্ধ ক্ষমতালিপ্সাই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করেছে।”

তবে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেন, “গত নয় মাসে আওয়ামী লীগ তেমন কোনো রাজনীতি করেনি, তবুও এত বড় নিষেধাজ্ঞা—এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।”

আওয়ামী লীগের পলাতক শীর্ষ নেতারা নিজেরাও স্বীকার করছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত দলের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা এক নেতা বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না। সেই সময়ের ইতিহাস শেখার সুযোগ হয়নি তার। অথচ এখন পরিস্থিতি জানার পরও তিনি বাস্তবতা মেনে নিতে পারছেন না।”

যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত এক শীর্ষ নেতা বলেন, “শেখ হাসিনা নিজেই জানেন না কী করবেন। তার সবচেয়ে বড় সমস্যা—তিনি কাউকে বিশ্বাস করেন না, এমনকি নিজের ছায়াকেও না। তার একটাই লক্ষ্য—ক্ষমতা। আর সেই ক্ষমতার নেশাই দলকে শেষ করেছে।”

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ যেসব সম্পদ লুট করেছে, তা বাজেয়াপ্ত করে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হোক।”
তিনি দলটিকে ‘ফ্যাসিবাদী ও সীমান্তপারের ষড়যন্ত্রকারী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে দেশের স্বাধীনতা হুমকিতে পড়বে।”


ইতিহাসের পটভূমি অনুযায়ী, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলায় বহু অর্জনের পাশাপাশি আজকের এই নিষেধাজ্ঞা একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দলটি একদিন দেশের স্বাধীনতায় ভূমিকা রাখলেও, শেখ হাসিনার শাসনামলে নানা বিতর্ক, লুটপাট ও ক্ষমতার অপব্যবহার দলটিকে পতনের কিনারায় নিয়ে এসেছে।
আজ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ইতিহাসের একটি চক্র সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেল।

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator