সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে একযোগে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন। তার মতে, এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র একটি সাধারণ রাজনৈতিক প্রচার নয়, বরং এটি এমন এক সুনামি, যা বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথকে পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী ভিডিও বার্তায় রনি বলেন, “আমরা এত দিন ধরে জুলাই সনদ, গণভোট, সংবিধান সংশোধন বা আইন-শৃঙ্খলা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কিন্তু শেখ হাসিনার এই সাক্ষাৎকার হঠাৎ করেই পুরো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দিয়েছে। এটি সরকারের নীতিনির্ধারকদের মাঝেও গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।”
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার এই সাক্ষাৎকার শুধু আওয়ামী লীগকে নতুন করে উদ্দীপনা দেয়নি, বরং সরকারের মধ্যেও অস্থিরতা তৈরি করেছে। রনির মতে, “আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী ও সমর্থক এই সাক্ষাৎকারগুলো দেখে নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যেন হঠাৎ নতুন প্রাণ ফিরে এসেছে। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো এখন নিজেদের কৌশল নতুনভাবে সাজাতে বাধ্য হচ্ছে।”
গোলাম মাওলা রনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা অত্যন্ত কৌশলগতভাবে তার এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি জানেন কখন, কীভাবে বক্তব্য দিতে হয়। অনেক সময় তার এমন কৌশলী চাল প্রতিপক্ষ রাজনীতিকদেরও বিভ্রান্ত করে ফেলে। বর্তমানে যখন সরকার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে, তখন শেখ হাসিনার এই সাক্ষাৎকার সেই প্রচেষ্টায় এক বড় ধাক্কা দিয়েছে।”
তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারগুলো ইন্ডিপেনডেন্ট, এএফপি, রয়টার্স এবং হিন্দুস্তান টাইমসের মতো আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এখন নতুনভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিফলিত হচ্ছে।
রনি বলেন, “এই সাক্ষাৎকারের পর শুধু দেশের ভেতর নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ওয়াশিংটনের পেন্টাগন, হোয়াইট হাউস, উইলসন সেন্টার, এমনকি ডোনাল্ড লুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এখন বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন শেখ হাসিনা নিজে, এবং তার বক্তব্যগুলো কীভাবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়েই এখন সবার চিন্তা।”
তার মতে, শেখ হাসিনার এই সাক্ষাৎকারগুলো শুধু সংবাদ নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণের জন্ম দিয়েছে। যেখানে সরকার, বিরোধী দল এবং আন্তর্জাতিক মহল—সকলকেই এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
রনি শেষাংশে বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক নতুন মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। শেখ হাসিনার এই কৌশলী পদক্ষেপ হয়তো তার সমর্থকদের উজ্জীবিত করবে, তবে এটি সরকারের ওপরও চাপ বাড়াবে। এখন দেখার বিষয়, এই ‘সাক্ষাৎকার সুনামি’ দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে কী ধরনের পরিবর্তন আনে।”



















