নদীর রুদ্রমূর্তি আর প্রকৃতির রোষানলে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত আর পার্বত্য এলাকা থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে ঘোরাউত্রা, ধনু ও আরও কয়েকটি নদীতে। ফলে জেলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফেরিঘাটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী সড়ক পানির নিচে চলে গেছে।
করিমগঞ্জের বালিখোলা ও চামড়াঘাট, মিঠামইনের শান্তিপুর, ইটনার বড়িবাড়ি ও বলদা ফেরিঘাট – এই সব জায়গাগুলোর সংযোগ রাস্তা ডুবে যাওয়ায় ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর।
নেই ফেরি, আছে দুর্ভোগ—বিকল্প হিসেবে ছোট নৌকা
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ফেরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে যোগাযোগব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে নদী পাড়ি দিচ্ছেন। তবে এইসব ছোট নৌকায় যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ এবং সময়সাপেক্ষ, বিশেষ করে বর্ষার এই মৌসুমে।
ইটনা উপজেলার কুর্শি গ্রামের বাসিন্দা মো. ছোটন কবির জানান, “কয়েকদিন ধরেই পানি বাড়ছে। আজ ঘাটে এসে দেখি রাস্তা তলিয়ে গেছে। আগে সহজে ফেরি দিয়ে শহরে আসতাম, এখন নৌকা করে অনেক কষ্টে আসতে হচ্ছে।”
সময় বাড়ছে, দুর্ভোগও বাড়ছে
মিঠামইনের ইসলামপুর গ্রামের মাফিজুল ইসলাম মাহফুজ বললেন, “আগে ফেরি দিয়ে মাত্র এক ঘণ্টায় বালিখোলা পৌঁছে যেতাম। এখন নদীপথে অনেক সময় লাগে। শুধু মানুষের চলাচলই নয়, মালামাল পরিবহনেও সমস্যা হচ্ছে।”
অন্যদিকে যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় পণ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
প্রশাসনের বক্তব্য: পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আছি
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, “নদীর পানি বাড়তে থাকায় ফেরিঘাটের রাস্তা ডুবে গেছে। তাই মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানালেন, “হাওরের প্রতিটি নদ-নদীতে পানির উচ্চতা বাড়ছে। তবে এখনো কোন নদী বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।”
সামনে আরও ভয়াবহ হতে পারে পরিস্থিতি
বর্তমানে কিশোরগঞ্জ হাওরের অবস্থা যেভাবে অবনতির দিকে যাচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে হাওরাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়বে, আর তা মানুষের জীবনযাত্রার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
এই ক্রান্তিকালে প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ ও সঠিক পরিকল্পনাই পারে দুর্ভোগ কমাতে।



















