ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন তুরস্কের গোয়েন্দাপ্রধান ইব্রাহিম কালিন। সোমবার (৩০ জুন) তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বৈঠকটি রোববার (২৯ জুন) একটি অজ্ঞাত স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। এতে হামাসের রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান মোহাম্মদ দারবিশের সঙ্গে ইব্রাহিম কালিন গাজার ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট এবং যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন প্রচেষ্টাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
তুরস্কের নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, উভয় পক্ষই ফিলিস্তিনি দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের গুরুত্ব এবং গাজার অবরুদ্ধ এলাকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছে। গোপন বৈঠকের মাধ্যমে একটি সমঝোতা রূপরেখা তৈরি করতে কাজ শুরু হয়েছে।
গত শুক্রবার (২৭ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি চুক্তি আসতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন, তবে তিনি গাজা থেকে হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করতে চান। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তুরস্কের গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে হামাস নেতাদের এই গোপন বৈঠক আরও গুরুত্ব পেয়েছে।
ইসরায়েল দীর্ঘ দুই মাস ধরে গাজার খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রাখায় মানবিক দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা বেড়ে গেছে। যদিও মার্কিন ঠিকাদার ও ইসরায়েলি তত্ত্বাবধানে এক বিতর্কিত পরিকল্পনা অনুসারে খাদ্য ট্রাকগুলো পুনরায় গাজায় প্রবেশ শুরু করেছে, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও কর্মকর্তারা বলছেন, এই সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলিবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে, যা সাহায্য সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করছে।
গাজার সংকট ও যুদ্ধবিরতির জন্য এই গোপন বৈঠক আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তুরস্কের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনি দলগুলোর ঐক্য এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি স্থাপনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
এই মুহূর্তে গাজা অঞ্চলের মানুষের জীবনের ওপর সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র অভাবে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তৎপর হয়ে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে, তবে সামরিক সংঘর্ষের কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না।
তুরস্কের গোয়েন্দাপ্রধান ইব্রাহিম কালিনের এই গোপন বৈঠক একটি নতুন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা মোকাবেলায় পথ প্রশস্ত করতে পারে। আগামী দিনগুলোতে এই বৈঠকের ফলাফল আন্তর্জাতিক মঞ্চে গুরুত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গাজার মানুষের দুরবস্থার প্রেক্ষাপটে দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার জন্য এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। তুরস্ক ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে সক্রিয় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য মাইলফলক হতে পারে।
এই বৈঠককে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক ও মানবিক উদ্যোগ আরও জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। যুদ্ধবিরতি চুক্তি সফল হলে গাজার মানুষ স্বস্তি পাবে এবং অঞ্চলে শান্তির বাতাস বইতে শুরু করবে।