close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

হা'মা'সে'র দৃঢ়তা, ই'স'রা'ই'লে'র ভেতরে ভা'ঙ'ন: যু'দ্ধ'বি'র'তি আলোচনায় স্থ'বি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থা, হামাসের শক্ত অবস্থান, আর ইসরাইলের ভেতরে রাজনৈতিক টানাপড়েন ঘিরে ঘনীভূত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট। রাফাহে ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে ইসরাইলি বাহিনী হত্যা করেছে অ..

সরাইলি দখলদার বাহিনীর টানা আগ্রাসন, মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব, আর হামাসের প্রতিক্রিয়া—সবকিছু মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। যদিও ইসরাইলের কিছু কর্মকর্তারা হামাসের ওপর চরম চাপ প্রয়োগের দাবি করছেন, তবুও বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।

ইসরাইলি মিডিয়ার ভিন্ন বিশ্লেষণ
ইসরাইলের প্রভাবশালী দৈনিক ইয়েদিয়োত আহারোনোথ–এর বিশ্লেষক অভি ইয়াসাখরফ বলেন, “হামাস এখনো শক্ত অবস্থানে আছে। তারা ভেঙে পড়েনি বা আত্মসমর্পণের কোনও লক্ষণ দেখায়নি।” তিনি আরও বলেন, “স্টিভ উইটকফের মধ্যস্থতায় দেওয়া প্রস্তাবের প্রতি হামাসের জবাব থেকেই বোঝা যায়, তারা এখনো দখলদারদের দাবি মানার জন্য প্রস্তুত নয়।”

আরেক বিশ্লেষক আসাভ মেয়দানি বলেন, “ইসরাইল এখন বহু অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত। রাজনৈতিক অস্থিরতা, দক্ষিণ ও উত্তরের যুদ্ধক্ষেত্রে পুনর্গঠন, এবং পশ্চিমা চাপ—সবমিলে নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।” তিনি দাবি করেন, “নেতানিয়াহুর প্রধান উদ্দেশ্য এখন নিজের রাজনৈতিক টিকে থাকা নিশ্চিত করা।”

হামাসের অবস্থান এবং প্রতিক্রিয়া
হামাস উইটকফের প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ জানালেও, তাদের দাবি ছিল যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি ও অবরোধ প্রত্যাহার। তারা স্পষ্ট জানায়, এ দুই শর্ত ছাড়া আলোচনার কোনও অর্থ হয় না। তবে এই প্রতিক্রিয়াকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন উইটকফ, যা আলোচনা আরও পিছিয়ে দিয়েছে।

হামাস পাল্টা বিবৃতিতে বলেছে, “আমাদের জবাব চুক্তির কাঠামোর মধ্যেই ছিল। উইটকফ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন এবং মধ্যস্থতার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।”

রাফাহে গণহত্যা: ত্রাণ নিতে এসে প্রাণ হারালেন ৫০ জন
এই রাজনৈতিক নাটকীয়তার মধ্যেই, শনিবার রাতে দক্ষিণ গাজার রাফাহর আল-মাওয়াসি এলাকায় মানবিক ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ মানুষের ওপর বর্বর হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আমেরিকান এনজিও ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’-এর ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ভিড় করতেই ইসরাইলি সামরিক যানবাহন ও ড্রোন থেকে নির্বিচারে গুলি ও বিস্ফোরক ছোড়া হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এতে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত ও ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের মরদেহ নাসের হাসপাতাল ও রেড ক্রসের ফিল্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়।

চিকিৎসাকর্মীরা জানান, নিরবচ্ছিন্ন গুলিবর্ষণের ফলে অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। অনেক আহতকে ঠেলাগাড়িতে করে সরিয়ে নিতে হয়েছে।

একই সময়ে গাজার কেন্দ্রস্থলে নেটজারিম করিডোরবুরেইজ শরণার্থী শিবিরের কাছেও ইসরাইলি বাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালায়। এতে আরও একজন নিহত ও ২০ জন আহত হন।

ইসরাইলের অস্বীকৃতি ও তদন্তের ভান
এ ঘটনায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর মুখপাত্র অভিচাই আদ্রেয়ি দাবি করেন, “আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যে সেনাবাহিনীর গুলিতে হতাহত হয়েছে।” তবে, ‘তদন্ত চলছে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, “ইসরাইল পরিকল্পিতভাবে মানবিক ত্রাণকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এটি এক ধরনের ব্ল্যাকমেইল, যাতে অনাহারে থাকা মানুষদের হত্যা করা সহজ হয়।”

গণহত্যার ভয়াবহ পরিসংখ্যান
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অব্যাহত সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত গাজায় ৫৪,৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ, যাদের অনেকেই মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।হামাসের প্রতিরোধ, ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ সংকট, এবং যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অচলাবস্থা—সবমিলে পরিস্থিতি যেন ক্রমেই ভয়ঙ্কর মোড় নিচ্ছে। ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক শক্তির পক্ষপাতমূলক ভূমিকা আরও একবার এই সংকটকে মানুষের রক্ত ও আর্তনাদের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে।

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator