আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া বহু নাগরিকের সন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিশনের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে এই কমিশনকে আরও ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ স্বাক্ষরিত একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, তদন্ত কমিশনের কার্যকাল ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলো। এই নতুন সময় গণ্য হবে ১ জুলাই ২০২৪ থেকে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সরকার Commissions of Inquiry Act, 1956 (Act No. VI of 1956)-এর সেকশন ৩ অনুযায়ী কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে গঠিত গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশনই এবার নতুন মেয়াদে কাজ চালিয়ে যাবে।
এই তদন্ত কমিশনের কাজ হচ্ছে—২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২۳ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান করা, তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং এই গুমগুলোর পেছনে কী পরিস্থিতি বা সংস্থা কাজ করেছে তা নির্ধারণ করা।
এই পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
অন্য সদস্যরা হলেন:
-
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী
-
বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী নূর খান
-
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস
-
মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন
তারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ, আত্মীয়স্বজনদের সাক্ষাৎকার, নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বক্তব্য নেওয়া ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে ঘটনার স্বচ্ছতা তুলে ধরতে কাজ করছেন।
গুম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশ-বিদেশে সমালোচনা চলছিল। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও বাংলাদেশে গুমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে সত্য উদঘাটনের পদক্ষেপ নেয়।
এই কমিশন মূলত কাজ শুরু করে গত বছর, এবং নির্ধারিত মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুন মাসেই তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তদন্তের পরিধি বিশাল হওয়ায় এবং আরও তথ্য প্রয়োজন হওয়ায় কমিশনের সময়সীমা আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।
কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে একদিকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর মাঝে আশার আলো জেগেছে, অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই কমিশনের নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
তবে কমিশনের সদস্যরা বলছেন, তারা নিরপেক্ষভাবেই তদন্ত করছেন এবং সত্য উদঘাটনের চেষ্টায় আপ্রাণ পরিশ্রম করছেন।
ভুক্তভোগীদের পরিবার, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজ এই কমিশনের ফলাফলের দিকে নজর রাখছে। যদি কমিশন সত্যিই গুমের ঘটনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য দিতে পারে, তবে এটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে পারে।
তবে এখনো দেখা যাচ্ছে—অনেক গুমের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নীরব অবস্থানে রয়েছে, তথ্য দিতে অনিচ্ছুক, কিংবা গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে কমিশনের সামনে রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই ছয় মাসে কমিশন তাদের ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন আরও জোরদার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও তারা সাক্ষাৎকার, ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন প্রণয়ন কাজেও মনোযোগী হবে।
অবশেষে, ডিসেম্বরের শেষে কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে হয়তো অনেক নিখোঁজ মানুষ ও তাদের পরিবার একটি নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা পাবে—যা এতদিন অধরা ছিল।