close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

গরু বিক্রি করে গুলিবিদ্ধ আরমানের চিকিৎসা চালানোর সংগ্রাম—অভাবের কাছে হার মানছে সাহসী ছাত্র!

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নোয়াখালীর শান্তসীতা গ্রামের ১৬ বছর বয়সী কিশোর আরমান হোসেন হৃদয়ের সংগ্রাম যেন এক অসীম লড়াই। তিনি একদিকে পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন, অন্যদিকে দেশের জন্য কিছু করার তাড়
নোয়াখালীর শান্তসীতা গ্রামের ১৬ বছর বয়সী কিশোর আরমান হোসেন হৃদয়ের সংগ্রাম যেন এক অসীম লড়াই। তিনি একদিকে পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন, অন্যদিকে দেশের জন্য কিছু করার তাড়নায় ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখে সিদ্ধান্ত নেন ঢাকায় গিয়ে যোগ দেবেন সেই আন্দোলনে। কিন্তু নিঃশব্দে ওই যাত্রা তার জীবনে নিয়ে আসে এক ভয়ঙ্কর অধ্যায়। এটা ছিল ১ আগস্টের কথা। আরমান নিজের জমানো টাকা নিয়ে ঢাকা চলে যান। তার উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা, যা তখন সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করছিল। তিনি সেখানেই অবস্থান করছিলেন তার ফুফাতো ভাইয়ের বাসায়। তবে ৫ আগস্ট বিকেলে বংশাল থানার সামনে ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা—পুলিশের টিয়ারশেল ও গুলির আঘাতে আহত হন আরমান। আহত অবস্থায় তার সহপাঠীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে চিকিৎসকরা দুটি গুলি বের করেন তার শরীর থেকে। পরের দিন ৬ আগস্ট, আরমান বাড়ি ফিরে আসেন, তবে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শরীরের ক্ষতগুলো যন্ত্রণা সৃষ্টি করতে থাকে, আর তার মাথার মধ্যে থাকা গুলি আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা চালাতে গিয়ে আরমানের পরিবার যে চরম কষ্টে পড়েছে, তা যেন আরেকটি দুঃখের গল্প। তার বাবা, আনাল হক, যার একদিকে দুই মেয়ে এবং আরমান সহ আরও ছেলে রয়েছে, নিজের সন্তানকে সুস্থ করার জন্য শেষ পর্যন্ত ঘরের একমাত্র গরু ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, গরু বিক্রির টাকাও এখন শেষ। চিকিৎসা চালানো নিয়ে আরমানের পরিবার এখন এক গভীর সংকটে। আরমানের শরীরে তিনটি গুলি রয়েছে—দুটি বুকে এবং একটি মাথায়। মাথার গুলির স্থানে প্রবল যন্ত্রণা তাকে প্রায় সময়ই অস্বস্তিতে ফেলছে। পরীক্ষার খাতায় লিখতে গেলেও মাথায় ব্যথা অনুভব হয়, ফলে থেমে থেমে কাজ করতে হয়। মাথার ব্যথা কখনোই কমে না, সবসময় টনটন করতে থাকে। তার বাবা, আনাল হক, জানিয়েছেন, "আমি পাগলের মতো হয়ে আছি। আমার ছেলে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বারবার হাসপাতাল ফিরে যায়। চিকিৎসকরা বলছেন, তার মাথায় আরেকটি গুলি রয়েছে, যা বের করতে হলে আরও খরচ লাগবে। কিন্তু আমাদের কাছে আর কোনো টাকা নেই। আমি ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছি, অথচ চিকিৎসা করাতে পারছি না।" আরমানের শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানালেন, "আরমান অনেক দিন ধরে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিল, তবে তার বোনের কাছে জানতে পারি, আরমান গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসার জন্য গরু বিক্রি করেছে। তার পরিবার এখন চরম কষ্টে রয়েছে, কিন্তু যদি কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে তার চিকিৎসা সম্পন্ন করা সম্ভব।" নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হাসিব আহমেদ বলেন, "আরমান একজন সাহসী ছেলে, সেদিন সে বড় কষ্ট সহ্য করে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে সাহায্য না করলে তার চিকিৎসা পুরোপুরি সম্পন্ন করা কঠিন। আমরা তাকে সাহায্য করার জন্য পরিকল্পনা করব।" এদিকে, সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আখিনূর জাহান নীলা জানিয়েছেন, "এই বিষয়টি আমি জানতাম না, তবে এখন যদি তার প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া যায়, আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং তার চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।" এমন এক সংকটের মধ্যে, আরমানের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের সবার সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই অল্প বয়সী ছেলেটির জন্য যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন, তারা তার সুস্থতার পথে বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন। এটা একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা, যেখানে আরমান এবং তার পরিবার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজের সকলের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়াই হবে মানবতার সঠিক পরিচয়।
No comments found


News Card Generator