বিদেশ থেকে ফিরেই গ্রেফতার হলেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভূঁইয়া লুটুল। বৃহস্পতিবার রাতে চীন সফর শেষে দেশে পৌঁছানো মাত্রই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কামরুজ্জামান লুটুল দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি চীন সফরে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকেই দেশে ফিরেন গতকাল রাতের ফ্লাইটে। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন স্ক্যানিংয়ের সময় তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সনাক্ত হয়। এরপরই তাকে আটক করা হয়।
পরদিন শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয় গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশের কাছে। পরে সদর থানা পুলিশ তাকে গোপালগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। আদালত শুনানি শেষে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, কামরুজ্জামান লুটুলকে গোপালগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাটি পূর্বেই রেকর্ডভুক্ত এবং চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে এই গ্রেপ্তার।
জানা গেছে, শওকত আলী দিদার হত্যাকাণ্ডটি বেশ আলোচিত ঘটনা ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং আধিপত্য বিস্তারের ইস্যু জড়িত বলে অভিযোগ উঠে। দিদার ছিলেন একজন তৃণমূলের জনপ্রিয় নেতা এবং দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার হঠাৎ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় রাজনৈতিক অঙ্গনে।
ঘটনার পরপরই নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয় এবং তাতে কামরুজ্জামান লুটুলের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তদন্ত চলাকালীন সময়ে পুলিশ বারবার তাকে খুঁজেও পাচ্ছিল না।
সর্বশেষ দেশে ফেরার পর তার অবস্থান সনাক্ত করে তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই গ্রেফতারের খবরে গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের একটি অংশ বলছে, আইন নিজের গতিতেই চলবে এবং কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। অন্যদিকে বিএনপিপন্থী নেতারা অভিযোগ করছেন, এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা এবং বিরোধী মতকে দমন করার কৌশল।
জেলা প্রশাসন বলছে, মামলাটি এখন বিচারাধীন এবং আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
একজন সাবেক জনপ্রতিনিধিকে এভাবে বিদেশ ভ্রমণ থেকে ফেরার পরপরই গ্রেপ্তার হওয়া নিঃসন্দেহে বড়সড় বার্তা দিচ্ছে। এটি শুধু একটি মামলার অগ্রগতি নয়, বরং রাজনৈতিক অঙ্গনের উত্তাপ এবং আইনের শাসনের বাস্তব প্রতিফলন বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।