৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক নতুন মোড় নেয়। ছাত্ররা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থনে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন নতুন ইতিহাস তৈরি করে। কিন্তু তার পরদিন ৬ আগস্ট রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান হেফাজত নেতা ও খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক। সেখানে তাদের মধ্যে নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
মামুনুল হক তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সহযোগিতায় দীর্ঘ সময় ধরে তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ করতে সক্ষম হন। সেসময় খালেদা জিয়া অত্যন্ত শান্তভাবে তাঁর কথা বলেন এবং দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, এবং দেশের সম্পদ রক্ষা করার বিষয়ে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, "আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করি না, তবে আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট। ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি যারা করেন, তাদের আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।"
মামুনুল হক আরও বলেন, তিনি অত্যন্ত অবাক হন যখন খালেদা জিয়া তার জীবনের দুঃখ-দুর্দশার কোনো কথা উল্লেখ করেননি, বরং দেশের প্রতি তার অবিচল ভালোবাসা এবং জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, "বেগম খালেদা জিয়া মনে করতেন যে বিএনপি ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করে না, তবে তাদের অবস্থান স্পষ্ট।"
এ সময় তিনি বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, "অনেকে মনে করেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একই ধরনের দল, কিন্তু তা নয়। এই দুটি দলের মধ্যে অনেক ঐতিহাসিক পার্থক্য রয়েছে। যেমন, আবু জাহেল ও আবু তালেবের মধ্যে পার্থক্য ছিল, তাই বিএনপির নেতৃত্বকেও মনে রাখতে হবে যে তাদের ভূমিকা আবু তালেবের মতো, আর আওয়ামী লীগের ভূমিকা আবু জাহেলের মতো।"
তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি ও ইসলামী শক্তির মধ্যে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই দুই শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির পথে বড় বাধা সৃষ্টি হবে। যারা ইসলামের বিরুদ্ধে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের শত্রু, তারা আমাদের মূল শত্রু।"
মামুনুল হক তার বক্তব্যে বলেন যে, বাংলাদেশের মুসলিম জাতির জন্য ইসলামী শক্তির সঙ্গে জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্য অপরিহার্য, কারণ একমাত্র ঐক্যবদ্ধভাবেই তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে। তিনি এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন যেখানে বাংলাদেশ বিরোধী ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার শক্তিশালী হয়ে উঠবে, যা দেশের জন্য হুমকির সৃষ্টি করতে পারে।
মামুনুল হকের এই বক্তব্যে তিনি দেশের প্রতি অবিচল আস্থা এবং জাতীয় ঐক্যের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন, যা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে উঠে এসেছে।