close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার পেশাগত অবস্থান নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর মন্তব্য এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম জনগণের কথা বলছে না, বরং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যার ফলে দেশের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের মূল চরিত্র সংকটে পড়েছে। এমনকি অনেকেই দাবি করছেন, অনেক গণমাধ্যমের হাতে "রক্ত" আছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই উদ্বেগের মধ্যে, গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ : গণমাধ্যম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এই সংলাপে গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা, স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের অধিকার এবং বিভিন্ন সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সংকট:
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ জানান, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে কমিশন কাজ করছে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে তাদের জবাবদিহিতা বাড়ানো হবে এবং অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
পেশাগত সংকট এবং সাংবাদিকদের দাবি:
প্রধান উপদেষ্টা শফিকুল আলম এই প্রসঙ্গে বলেন, গত ১৫ বছর ধরেই গণমাধ্যম চাপের মুখে রয়েছে, ফলে তারা জনগণের কথা বলতে পারছে না। তিনি আরো বলেন, মিডিয়ার ভূমিকা ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনাগুলো তুলে ধরা, কিন্তু সরকারের প্রেস উইংয়ের কাজ ছিল এসব ঘটনা সংবাদ থেকে সরিয়ে দেওয়া। শফিকুল আলম দাবি করেন, সাংবাদিকদের বেতন নিয়ে সংস্কার প্রয়োজন। ওয়েজ বোর্ড সিস্টেমের পরিবর্তে ন্যূনতম বেতন চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, যা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
সংস্কারের প্রয়োজন:
মতিউর রহমান চৌধুরী, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক, বলেন, সংস্কারের কথা বলার আগে ইতিহাসের সংস্কার হওয়া উচিত, কারণ রাজনৈতিক সরকারের পরিবর্তনে ইতিহাসও পরিবর্তিত হয়। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সরকার যদি কমিশনের পরিশ্রমের ফল বাস্তবায়ন না করে, তবে কোনো লাভ হবে না।
এছাড়া সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান জানান, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি পক্ষপাতিত্বের কারণে সাংবাদিকতার এই দুরবস্থা। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতার স্বকীয়তা রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ কমানো উচিত।
গণমাধ্যমের ভবিষ্যত এবং নতুন কৌশল:
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের অধিকার ও আত্মমর্যাদা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, গণমাধ্যম স্বাধীন হতে হলে সব ধরনের দুর্নীতি ও অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে জবাবদিহি তৈরি করতে হবে।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এমএ আজিজ বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকদের ইউনিয়নকে একীভূত করা দরকার, না হলে তারা প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করতে পারবে না।
সমাপ্তি:
এই সংলাপের শেষে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অনেকেই কাজ করছেন, কিন্তু ডিজিএফআই ও এনএসআইসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যকলাপ গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে, যা দূর করতে হবে।
এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম শামীম রেজা, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামালসহ আরো অনেকে অংশগ্রহণ করেন।
সংলাপে উঠে আসা দাবিগুলি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছে যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার পেশাগত মর্যাদা রক্ষার জন্য অতীব জরুরি সংস্কার প্রয়োজন, যা দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি অগ্রণী অংশ হতে পারে।
Ingen kommentarer fundet