গভীর রাতে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ঢাকা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতের মণিপুরে গভীর রাতে আঘাত হানা ভূমিকম্পের কম্পনে কেঁপে উঠল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সহ আশপাশের বহু জেলা। রিখটার স্কেলে ৫.২ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ঘুম ভেঙে যায় অনেকের, যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খ..

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ২৪ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করেই কেঁপে ওঠে ভূ-পৃষ্ঠ। ঘুমন্ত নগরজীবনে এক মুহূর্তের অস্থিরতা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এই ভূমিকম্পে। ভারতের মণিপুর রাজ্যের ইম্ফলের কাছে উৎপন্ন ৫ দশমিক ২ মাত্রার এই ভূমিকম্পে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় কম্পন অনুভূত হয়েছে।

উৎপত্তিস্থল ও মাত্রা:
বিশ্বের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ভলকানো ডিসকভারি’ সূত্রে জানা যায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ইম্ফল শহর থেকে প্রায় ৩৯ কিলোমিটার দূরে, মণিপুরের মোইরাং শহরের নিকটবর্তী অঞ্চলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৪৭ কিলোমিটার গভীরে উৎপন্ন হওয়ায় ভূমিকম্পটির প্রভাব ছিল তুলনামূলক বেশি। কম গভীরতার কারণে ভূমিকম্পের কম্পন ভূপৃষ্ঠে ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়েছে, যা একটি গভীর উৎপত্তিস্থলের ভূমিকম্পের তুলনায় বেশি ভয়াবহতা তৈরি করতে পারে।

ভৌগোলিক তথ্য:
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, ভূমিকম্পটির কেন্দ্রবিন্দুর ভৌগোলিক অবস্থান ছিল ২৪ দশমিক ৪৯ অক্ষাংশ এবং ৯৩ দশমিক ৭৮১৬ দ্রাঘিমাংশ। যা রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

ঢাকায় এবং আশেপাশে প্রতিক্রিয়া:
রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় এই ভূমিকম্পের কম্পন স্পষ্টভাবে টের পাওয়া গেছে। অনেকেই জানান, রাতে হঠাৎ ঘরের জানালা ও দরজা কাঁপতে শুরু করে। কেউ কেউ আতঙ্কে ঘর থেকে বের হয়ে আসে।

মানুষের অভিজ্ঞতা ও আতঙ্ক:
ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা আসিফ হোসেন বলেন, "রাতে ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ বিছানায় ঝাঁকুনি অনুভব করি। প্রথমে বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে। পরে দেখি জানালাও কাঁপছে। তাড়াতাড়ি বাইরে বের হয়ে আসি।"
অনুরূপ অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন গুলশান, মোহাম্মদপুর, বনানী, খিলগাঁওসহ আরও অনেক এলাকার মানুষ।

ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর নেই:
এখন পর্যন্ত কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক সংকেত হতে পারে। ভূকম্পন প্রবণ অঞ্চলে অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ও জনসচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতামত:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল মজিদ বলেন, "কম গভীরতায় উৎপন্ন ভূমিকম্প সাধারণত বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা রাখে। ভাগ্য ভালো যে এটি দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। কিন্তু বারবার এমন কম্পন ঘটলে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।"

উপসংহার:
যদিও মঙ্গলবার দিবাগত রাতের ভূমিকম্প কোনো বড় ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়নি, তবে এটি ছিল একটি সময়োপযোগী সতর্কতা। ভবিষ্যতে ভূমিকম্প মোকাবিলায় পরিকল্পিত নগরায়ন, সচেতনতা বৃদ্ধি ও জরুরি প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই।

Tidak ada komentar yang ditemukan