close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

গাজায় শান্তির প্রতীক্ষা শেষ, ৩ লাখ ফিলিস্তিনি ঘরে ফিরলেন—নতুন জীবন শুরুর লক্ষ্যে

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ১৫ মাস পর যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর হওয়ার মাত্র দুই দিনের মধ্যে, উত্তর গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি তাদের বা
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ১৫ মাস পর যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর হওয়ার মাত্র দুই দিনের মধ্যে, উত্তর গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িতে ফিরেছেন। ৪৭০ দিন পর, তাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে, যদিও এই ফিরে আসার পথ ছিল বিপদসংকুল এবং কষ্টকর। প্রত্যাবর্তনের উল্লাস উত্তর গাজার বাসিন্দারা যখন নিজেদের ঘরে ফিরে আসেন, তখন তাদের উল্লাসের কোনো সীমা ছিল না। ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় গাজার প্রায় সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেলেও, পরিবারের সদস্যদের সাথে বাড়ি ফিরে আসা ছিল তাদের জন্য এক নতুন আশা। গাজা সিটির প্রধান সড়কে ‘গাজায় স্বাগতম’ লেখা একটি ব্যানার টাঙানো ছিল, যা জানিয়ে দেয়, ফিরিয়ে আনা হচ্ছে মানুষের আবেগ, সংগ্রাম, এবং প্রতিশ্রুতি। সোমবার সকালে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নেৎজারিম করিডোর দিয়ে ঘরে ফিরতে শুরু করেন। এই প্রত্যাবর্তন ছিল তাদের দীর্ঘ অপেক্ষার ফল। অনেকেই ঘোড়া বা গাধার গাড়িতে নিজেদের সামান্য মালপত্র নিয়ে ফিরেছেন। ২২ বছর বয়সী লামিস আল ইওয়াদি, যিনি দীর্ঘদিন পর নিজের এলাকা ফিরে পেয়েছেন, বলেন, "আজকের দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। এতদিন মনে হয়েছিল আমি মৃত। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আমি আবার জীবিত হয়েছি।" নতুন আশার বীজ তবে, ফিরে আসা ফিলিস্তিনিরা যে ধ্বংসস্তূপে ফিরে যাচ্ছেন, তাতে তাদের হতাশার কোনো শেষ নেই। সেদিকে তারা শুধু চোখ মেলে তাকাননি, বরং নতুন আশা ও শক্তির প্রতীক হিসেবে ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছেন। লামিস আরও বলেন, “আমরা আমাদের ঘরবাড়ি আবার তৈরি করব। এমনকি যদি বালি আর কাদামাটি দিয়েও করতে হয়, তবুও।” দুর্গত মানুষের জন্য জরুরি সহায়তা ফিলিস্তিনিরা যখন ঘরে ফিরছেন, তখন তাদের জন্য জরুরি সহায়তার প্রয়োজন পড়েছে। হামাসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, উত্তর গাজায় ফিরে আসা ৩ লাখ মানুষের জন্য অন্তত ১ লাখ ৩৫ হাজার তাঁবু প্রয়োজন। এসব তাঁবু তাদের জন্য সাময়িক আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে, যতক্ষণ না তাদের বাড়ি এবং জীবন নতুন করে দাঁড়িয়ে যায়। যুদ্ধের পরিণতি ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট ইসরায়েলের হামাসের বিরুদ্ধে শুরুর পর থেকে গাজায় শুরু হয় ব্যাপক হামলা। এই ১৫ মাসের মধ্যে, প্রায় ৪৭ হাজার ৩ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ১২ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। যুদ্ধের পরিণতিতে গাজার বাসিন্দাদের অধিকাংশই তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তবে, যুদ্ধবিরতির পর তাদের ফিরতি যাত্রা শুরু হলেও, পুনর্গঠন এবং পুনর্বাসনের কাজ এখনো অনেকটাই বাকি। যুদ্ধবিরতি এবং শান্তির পথ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসরের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এই যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হওয়ার পর থেকে গাজার বাসিন্দারা নিজেদের ঘরবাড়ি ফিরে পেতে শুরু করেছেন। তবে, গাজা উপত্যকার পুনর্গঠন এখনো একটি দীর্ঘ এবং কঠিন প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনিরা এখন পুনঃনির্মাণের পথে রয়েছেন, যাতে তাদের ধ্বংস হওয়া বাড়িঘর এবং জীবনের ক্ষতি পূর্ণাঙ্গভাবে দূর করা যায়। তাদের এই প্রত্যাবর্তন শুধু একটি ভূগোলিক এলাকা ফিরে পাওয়ার বিষয় নয়, বরং এটি মানবাধিকার, স্বাধীনতা এবং নির্যাতন থেকে মুক্তির এক নতুন পথে যাত্রার সূচনা। গাজার এই প্রত্যাবর্তন ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন এক আশা নিয়ে এসেছে। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তারা নতুন করে জীবন গড়ার প্রতিজ্ঞা করছে, এবং একদিন তাদের স্বপ্ন পূর্ণ হবে—এটি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
Walang nakitang komento