গাজায় মৃত্যু-মিছিল: ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বোমায় প্রাণ হারালেন আরও ১২৫ ফিলিস্তিনি, তেলআবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইয়েমেন
দখলদার ইসরাইলি বাহিনী আবারও অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বর আক্রমণ চালিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা যেভাবে একের পর এক বোমা নিক্ষেপ করেছে, তাতে কমপক্ষে ১২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এদের মধ্যে ৩৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত আল-মাওয়াসির এলাকাতেই।
এই তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দিনদিন আরও নৃশংস হয়ে উঠছে ইসরাইলি বাহিনী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, উত্তর গাজার সব সরকারি হাসপাতাল বর্তমানে কার্যত অচল। ইসরাইলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় হাসপাতালগুলোতে আর কোনো সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আহতদের চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর হার প্রতিদিন বাড়ছে।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই বোমাবর্ষণ
এই মুহূর্তে কাতারে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে। সেই আলোচনার মাঝেই ইসরাইল স্থল আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ফাঁকে একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় চলমান আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত মোট ৫৩,৩৩৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১,২১,০৩৪ জন ছাড়িয়ে গেছে। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি—তাদের হিসাবে এখন পর্যন্ত ৬১,৭০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
তাদের ধারণা, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজার হাজার মানুষ চাপা পড়ে আছেন, যাদের জীবিত থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে ভবিষ্যতে এই সংখ্যাটি আরও বৃদ্ধি পাবে।
ইয়েমেনের পাল্টা হামলা: তেলআবিবে আতঙ্ক, বিমানবন্দর বন্ধ
এই মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাবে ইয়েমেনের সশস্ত্র হুথি আনসারুল্লাহ গোষ্ঠী পাল্টা আক্রমণে নেমেছে। তারা ইসরাইল অধিকৃত কেন্দ্রীয় অঞ্চল, বিশেষ করে তেলআবিবসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম জানায়, এই হামলার ফলে দেশজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে এবং তড়িঘড়ি করে বেন-গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলও ব্যাহত হয়েছে।
ইয়েমেনের হুঁশিয়ারি
হুথি গোষ্ঠীর তথ্য শাখার উপপ্রধান নাসরেদ্দিন আমের এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে বলেন,
“ইসরাইলি দখলকৃত ভূখণ্ডের সব বিমানবন্দর এখন অনিরাপদ। আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর উচিত ইসরাইলগামী ফ্লাইট এড়িয়ে চলা।”
তিনি আরও বলেন,
“গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ না হলে, ইয়েমেনি সামরিক অভিযান আরও ঘন ঘন ও জোরালো হবে। ইসরাইলকে এর মূল্য চোকাতে হবে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কোথায়?
যখন একদিকে মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা হতাশাজনক। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এখনো দৃশ্যমান কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন থেমে নেই, বরং আরও তীব্র হচ্ছে।
গাজা যেন এখন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে—যেখানে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে, কিন্তু দুনিয়া কেবল নীরব দর্শক।