গাজায় পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় মারা যেতে পারে ১৪,০০০ শিশু: জাতিসংঘের সতর্কবার্তা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মানবতার হৃদয় ঝঙ্কৃত করেছে জাতিসংঘের সতর্কবার্তা, যেখানে বলা হয়েছে গাজায় যদি পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছানো না হয়, তাহলে প্রায় ১৪,০০০ শিশু মৃত্যুর মুখে পড়তে পারে। চলমান অবরোধ আর দুর্যোগপূর্ণ ..

গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের গভীরতা: ১৪,০০০ শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা জাতিসংঘের ত্রাণ অবরোধ নিয়ে উদ্বেগ

গাজার সীমান্তবর্তী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংকটের মধ্যে মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই সংকটময় হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার এক ভয়ঙ্কর সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যেখানে তিনি জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় যদি গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ পৌঁছানো না যায়, তাহলে প্রায় ১৪,০০০ শিশু প্রাণ হারাতে পারে।

এই সতর্কবার্তা বিশেষ করে গাজার অবরোধ ও খাদ্য সংকটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। টম ফ্লেচার ব্রিটেনের বিবিসি রেডিও ৪-এ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসরাইল কর্তৃক গাজার ত্রাণ অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করলেও, এই শিথিলতা পর্যাপ্ত নয় এবং গাজায় তীব্র দুর্ভিক্ষের মোকাবেলায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে না।

তিনি আরও জানান, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১১ সপ্তাহ ধরে চলমান ত্রাণ অবরোধের শিথিল ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে গাজার জন্য প্রবেশ করা ত্রাণের পরিমাণ ছিল অত্যন্ত সীমিত।

গতকালের পরিস্থিতি সম্পর্কে ফ্লেচার জানিয়েছেন, গাজায় মাত্র পাঁচটি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পেরেছে। যদিও এসব ট্রাকে শিশুদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টিকর সামগ্রী ছিল, কিন্তু সেগুলো এখনও গাজার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। এসব ত্রাণ সামগ্রী সীমান্ত এলাকায় আটকে আছে, যা মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করছে।

টম ফ্লেচার বলেন, "আমরা চাই, যতটা সম্ভব সংখ্যক শিশু প্রাণ রক্ষা করতে পারি আগামী ৪৮ ঘণ্টায়।"

কীভাবে নির্ধারিত হল ১৪,০০০ শিশুর ঝুঁকি?

জাতিসংঘের এই পরিসংখ্যান নির্ধারণে মাঠ পর্যায়ের তাদের দলে থাকা কর্মীরা গাজায় হাসপাতাল, স্কুল এবং বিভিন্ন আশ্রয়স্থল থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহ করছেন। যদিও অনেক কর্মী ইতিমধ্যেই নিহত হয়েছেন, তবুও তারা গাজায় থেকে পরিস্থিতি জরিপ করে যাচ্ছেন।

ফ্লেচার আরও জানান, এই তথ্য বিশ্বকে মানবিক সাহায্যের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।

গাজায় মানবিক সংকট: আন্তর্জাতিক চাপ ও রাজনৈতিক জটিলতা

গাজার এই তীব্র সংকটের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামরিক সংঘর্ষ। ইসরাইলি ত্রাণ অবরোধের কারণে গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবন এখন তীব্র সংকটে পড়েছে। বিদ্যুৎ, পানি, ও খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় দুর্ভিক্ষের আকার ধারণ করেছে পরিস্থিতি।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার ইসরাইলের কাছে ত্রাণ অবরোধ তুলে নিতে এবং মানবিক সাহায্যের প্রবাহ অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানাচ্ছে। তবে রাজনৈতিক বিবাদ ও নিরাপত্তা জটিলতার কারণে ত্রাণ সরবরাহ এখনও সীমিত।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের করণীয় ও আহ্বান

জাতিসংঘের এই উদ্বেগজনক সতর্কবার্তা বিশ্বকে জোরালো ভাবে আহ্বান জানাচ্ছে দ্রুত মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে। বিশেষ করে শিশুদের জীবন রক্ষার জন্য ত্রাণ পৌঁছানো অপরিহার্য।

বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার কর্মী, সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এখন একসাথে হয়ে গাজার মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে, অগোছালো এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার স্পষ্ট বলেছেন, "আমাদের সময় কম, এবং গাজার শিশুরা বাঁচানোর জন্য আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।"


গাজার এই মানবিক বিপর্যয় এবং ১৪,০০০ শিশুর মৃত্যুর সম্ভাবনা বিশ্বজুড়ে এক নিত্য নতুন প্রশ্ন উঠিয়েছে – মানবতা কি কি করবে যখন হাজার হাজার শিশু মৃত্যুর মুখোমুখি? জাতিসংঘের এই সতর্কবার্তা যেন সারা বিশ্বের নীরবতাকে ভেঙে দিয়ে দ্রুত সাড়া দেয়ার ডাক হয়ে ওঠে।

نظری یافت نشد