২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত আরও ৮৫, অনাহারে শিশুদের মৃত্যু বাড়ছেই: ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মানবতা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ৮৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার বরাত দিয়ে জানা গেছে, এই হামলায় নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রাণহানি ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২২ মে) ভোর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সময়ে দেইর আল বালাহ এলাকার আল-মাঘাজি শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন স্থানে চালানো হয় এ ধ্বংসাত্মক হামলা। আল-মাঘাজির ওপর পরিচালিত বোমাবর্ষণ ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এ হামলার পরপরই বহু আহত মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার করে আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আল-জাজিরার ফটো সাংবাদিক আশরাফ আমরা প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, আহত শিশুদের কোলে নিয়ে আতঙ্কিত, রক্তাক্ত ও কান্নারত স্বজনেরা ছুটে চলেছেন হাসপাতালের দিকে। গাজার ধ্বংসপ্রাপ্ত রাস্তায় কান্না ও চিৎকারে ভরে উঠেছে বাতাস।
ক্ষুধায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, দুর্ভিক্ষের মুখে গাজা
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গত কয়েকদিনে গাজায় অনাহারে মৃত্যুবরণ করেছেন অন্তত ২৯ জন শিশু ও বৃদ্ধ। ভয়াবহ খাদ্য সংকটের কারণে এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গাজার বহু এলাকায় এখন আর খাদ্যপণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, রুটির দোকানগুলো বন্ধ, সাহায্যের ট্রাক সীমান্তে আটকে আছে।
হাসপাতালগুলোতেও নেই খাবার, নেই ওষুধ। মা-বাবারা অপারগ হয়ে সন্তানদের দিকে তাকিয়ে কাঁদছেন—নিরন্ন মুখে একটি খাবার তুলে দিতে না পারার অসহায়তা চোখে মুখে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করলেও, গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ও হামলা অব্যাহত রয়েছে। ফলে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং জ্বালানির সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার পরিবার এখন বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টায় আশ্রয় নিয়েছে ধ্বংসস্তূপের নিচে, কিংবা সীমান্তবর্তী অনিরাপদ এলাকায়।
গণহত্যার অভিযোগ, চলছে আন্তর্জাতিক মামলা
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে গাজায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৭৬২ জনে। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ বলে উল্লেখ করে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) একটি মামলাও চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকার করা এই মামলায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে হামলা চালাচ্ছে—যা আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যার সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে।
বিশ্ব নিরব, শিশুদের আর্তনাদ আকাশে বাতাসে
গাজার পরিস্থিতি ক্রমেই আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। রোজকার এই প্রাণহানি ও ধ্বংসে শিশুরা যেন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের চোখে এখন আর স্বপ্ন নেই, আছে শুধুই ভয়, কান্না ও ক্ষুধা।
ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় যেখানে মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারও ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতা আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব মানবতার পক্ষ থেকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান এবং গাজায় জরুরি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি।