close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

গাইবান্ধায় অটোরিকশা চালক আরিফুল হত্যায় গ্রেফতার ১

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গাইবান্ধায় অটোচালক কিশোর আরিফুলকে গাঁজা খাইয়ে শ্বাসরোধে খুন করে ফেলে যায় বন্ধুরাই। পুলিশ রহস্য উদঘাটন করে গ্রেফতার করেছে দুই ঘাতককে।..

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ঘটে গেছে এক মর্মান্তিক ও ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। মাত্র ১৫ বছর বয়সী অটোরিকশা চালক আরিফুল মন্ডলকে পূর্ব পরিচিত দুই কিশোর-তরুণ গাঁজা খাইয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে রেখে যায় ফসলের জমির মাঝখানে। নিখোঁজ হওয়ার পরদিনই তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এমন এক নির্মম সত্য, যা কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা এলাকা।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম শিবরাম গ্রামের শহিদুল ইসলাম মন্ডলের ছেলে আরিফুল মন্ডল প্রতিদিনের মতো ২৮ জুন শনিবার বিকেলে অটো নিয়ে বের হন। রাতে আরিফুল আর বাড়ি ফেরেনি। পরদিন ২৯ জুন সকালে উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের চাকুলিয়ার বিল এলাকা থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি প্রথমে নিখোঁজ হিসেবেই বিবেচনা করছিল পরিবার, কিন্তু মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় পুরো পরিস্থিতি মোড় নেয় এক হত্যার মামলায়।

নিহত আরিফুলের বাবা শহিদুল ইসলাম মন্ডল বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপরই গাইবান্ধা জেলা পুলিশের একটি বিশেষ টিম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. শরিফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের সহায়তায় খুব দ্রুতই আসামিদের শনাক্ত করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় মনমথ কালিতলা এলাকার মোশারফ হোসেন মুশফিক (২৩) এবং পশ্চিম শিবরাম এলাকার শান্ত মিয়াকে (১৫)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তারা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে।

জবানবন্দিতে জানা যায়, পূর্বে আরিফুলের সাথে কথাকাটাকাটি হয়েছিল এই দুইজনের। সেই রেষ মেটাতেই ২৮ জুন রাতে তারা আরিফুলকে চাকুলিয়ার বিলে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে অতিরিক্ত গাঁজা সেবনে বাধ্য করে। যখন আরিফুল অচেতন হয়ে পড়ে, তখন তারা গলায় রশি পেঁচিয়ে দুই পাশে টেনে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যার পর আরিফুলের অটো চালিয়ে যায় উপজেলার নতুনহাট এলাকার একটি নির্জন স্থানে। সেখান থেকে অটোর ব্যাটারি খুলে বিক্রির উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায় তারা।

পরদিন পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করলেও হত্যার রহস্য জানতে সময় লাগে একদিনের বেশি নয়। ৩০ জুন সন্দেহভাজন হিসেবে মুশফিককে আটক করা হলে সে স্বীকার করে পুরো ঘটনা। এরপর পালিয়ে থাকা শান্তকেও ১ জুলাই গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বুধবার বিকালে গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুরো হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরা হয়। উপস্থিত ছিলেন সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ, ডিএসবি ইনচার্জ আব্দুল লতিফ, কাওসার আলীসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

এ হত্যাকাণ্ড ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র ১৫ বছরের এক কিশোর, যিনি পরিবার চালাতে অটো চালিয়ে রোজগার করছিলেন, তাকে এমনভাবে খুন করে তারই পরিচিত দুই বন্ধু—এ ঘটনা সবার হৃদয় স্পর্শ করেছে। স্থানীয়রা অবিলম্বে দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এই ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে কিশোর অপরাধ, মাদক সেবন, আর সামাজিক অবক্ষয়ের করুণ বাস্তবতা।

Ingen kommentarer fundet