গাজা উপত্যকার বিতর্কিত মানবিক সহায়তা কেন্দ্রগুলো থেকে ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৪১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) সতর্ক করেছে। এই সংখ্যা যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
২৪ জুন মঙ্গলবার জাতিসংঘের এই বার্তাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ২৭ মে থেকে গাজার বিকল্প সহায়তা বিতরণ কেন্দ্র চালু হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার অনুমতি ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে পরিচালিত হচ্ছে। এই কেন্দ্রে মানুষের ভিড় ও নিরাপত্তার অভাবে গুলির ঘটনা নিয়মিত ঘটে আসছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র থামিন আল-কেতান বলেন, “এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে তীব্র বিশৃঙ্খলা ও গুলির ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। দুর্ভিক্ষে কাতর গাজাবাসী খাবারের জন্য এখানে ভিড় জমায়, যার ফলে বহু বেসামরিক নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী বেসামরিক মানুষের খাদ্য ও জরুরি সহায়তার প্রবেশে বাধা দেওয়া এবং তাদের ওপর অস্ত্রপ্রয়োগ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।”
জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় সংস্থার প্রতিবেদনে জানা গেছে, গাজায় প্রতিদিনই নানা বয়সের বহু মানুষ নিহত ও আহত হচ্ছে। বিশাল মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় বেঁচে থাকা মানুষগুলোর মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। পরিস্থিতি ক্রমেই গভীর সংকটময় হয়ে উঠছে।
একই সময় জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিকল্প সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, যারা সরাসরি ইসরাইলি গোলাবর্ষণের শিকার হয়েছেন। ফলে গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট আরও তীব্রতর হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, সীমিতসংখ্যক সহায়তা বহর গাজায় পৌঁছানোর সময়ও ইসরাইলি গুলিতে আরও অন্তত ৯৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই তথ্য মানবিক কার্যক্রমে বাধা ও প্রাণহানির পরিসর আরও বিস্তৃত করছে।
অন্যদিকে, একটি আগের জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা মানবিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ফিলিস্তিনি কর্মীকে হামাস-ঘনিষ্ঠ সশস্ত্র ব্যক্তি হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে।
গাজায় সহায়তা পৌঁছানোতে বাধা, খাদ্য সংকট ও মানবিক দুর্ভোগের এই ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মহলে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি মানুষদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া এই অবস্থা মানবতার বিরুদ্ধে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে জাতিসংঘের বার্তা স্পষ্ট: গাজায় বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মানবিক সহায়তা অবাধে পৌঁছানো, এবং যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার প্রয়োজন। এই সংকট মোকাবিলায় বিশ্বকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, নয়তো মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে।