close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

গা'জা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষু'ধা'র্ত অঞ্চল: জাতিসংঘ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলি অবরোধ আর সামরিক আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজা আজ মানবতার ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষের মুখে। জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, সমগ্র জনগণই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, শিশুরা পড়েছে মৃত্যুর মুখে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়..

বিশ্ব এখন যে ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হতে যাচ্ছে, তা গাজার রক্তাক্ত প্রান্তরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। জাতিসংঘ সম্প্রতি এক বিস্ফোরক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকা বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

গাজার প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় দিন পার করছেন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) জানায়, সেখানে অন্তত ৫ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, জাতিসংঘ এটিকে একটি ‘পূর্ণমাত্রার মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

শিশুদের মৃত্যু ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে

ইউনিসেফের তথ্যে উঠে এসেছে আরও এক মর্মান্তিক চিত্র—১০ হাজারেরও বেশি শিশু ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে। যথাযথ চিকিৎসা ও খাদ্য সহায়তা না পৌঁছালে এই শিশুদের অনেকেই বাঁচবে না।

ইসরায়েলের টানা অবরোধ, ক্রমাগত বোমা হামলা ও যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা পৌঁছানো কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ প্রবেশের পথগুলোও নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ফলে সেখানে বসবাসরত ২৩ লাখ মানুষের জীবন পরিণত হয়েছে এক বন্দি শিবিরের বাস্তবতায়।

জাতিসংঘ মহাসচিবের জরুরি আবেদন

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন,

“গাজায় যে মানবিক বিপর্যয় চলছে, তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি না হলে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে মারা যাবে।”

তিনি বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেন এবং ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেন।

বিপর্যয়ের পেছনে ইসরায়েলি অভিযানের ভূমিকা

জাতিসংঘের একাধিক সূত্র বলছে, গাজার খাদ্য সংকট মূলত ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ও অবরোধের ফল। চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে গাজায় ইতোমধ্যেই ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১৮ লাখের বেশি মানুষ, যাদের আশ্রয় নেই, খাদ্য নেই, নিরাপত্তা নেই।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ

দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর অভিযোগ—আন্তর্জাতিক মহল কেবল উদ্বেগ প্রকাশেই সীমাবদ্ধ, বাস্তব উদ্যোগ নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন,

“এটা এখন আর শুধু গাজার সংকট নয়, মানবতার অস্তিত্বের সংকট। আজ যদি গাজায় এত লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যায়, তাহলে কাল হয়তো আরেকটি অঞ্চলের জন্য একই নীরবতা তৈরি হবে।”

উপসংহার: একটি জাতির বেঁচে থাকার লড়াই

গাজার মানুষেরা এখন এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙছে না—ভাঙছে বেঁচে থাকার একটি নতুন যুদ্ধে। শিশুদের কান্না, মায়েদের বুকফাটা আহাজারি, আর ক্ষুধায় ছটফট করা বৃদ্ধদের দৃশ্য আন্তর্জাতিক বিবেককে নাড়া দেয় না?

দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে এখনই জরুরি কার্যকর যুদ্ধবিরতি এবং সরাসরি ত্রাণ প্রবাহের ব্যবস্থা। গাজা এখন শুধু ক্ষুধার্ত নয়—একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতার প্রতিচ্ছবি।

No comments found


News Card Generator