ইরানের আকাশে নেই কোনো ধোঁয়া, নেই ধ্বংসযজ্ঞ কিংবা আতঙ্ক। অথচ পশ্চিমা মিডিয়াগুলো যেন হঠাৎই প্রবল বেগে গর্জে উঠেছে। একটার পর একটা সংবাদ, ভিডিও ও গুজব ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দেন—ইরানের দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু কেন্দ্র, ফোরদো ও ইসফাহানে চালানো হয়েছে ‘সফল সামরিক হামলা’। তাঁর ভাষ্যমতে, এই কেন্দ্রগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
ট্রাম্পের টুইটেই যেন আগুন লেগে যায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। মুহূর্তের মধ্যে বিশাল আলোড়ন তৈরি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, বিভ্রান্তি, ভিডিও আর যাচাইবিহীন ছবি। তেলের দামে ওঠানামা শুরু হয়, হরমুজ প্রণালীতে বাড়ানো হয় নজরদারি, এমনকি ইসরায়েলে ঘোষণা করা হয় আংশিক লকডাউন!
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, কোম প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত ফোরদো পরমাণু কেন্দ্র এক বিশেষ মার্কিন হামলায় ধ্বংস হয়েছে। অথচ তার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা তাসনিম-এর ফিল্ড রিপোর্টার সরেজমিনে পৌঁছান ফোরদোতে। তিনি দেখতে পান একেবারেই ভিন্ন চিত্র—পরিবেশ শান্ত, জনজীবন স্বাভাবিক, কোথাও ধোঁয়ার কুন্ডলি নেই, নেই আগুনের তীব্রতা বা সামরিক তৎপরতা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা গেছে, তারা রাতে কিছু ড্রোন বা বিমানবিধ্বংসী প্রতিরক্ষার আওয়াজ শুনেছেন বটে, কিন্তু সেটি ছিল মাঝেমধ্যে শোনা স্বাভাবিক শব্দ। বড় কোনো বিস্ফোরণ বা ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন তারা দেখেননি। ফোরদো কেন্দ্রের আশেপাশে নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল পূর্বের মতোই। তেহরান-কোম মহাসড়কে যান চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।
ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা ঘটনাস্থল থেকে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করে জানায়, এখানে কোনো বিকিরণ বা রাসায়নিক দূষণের প্রমাণ নেই। জনসাধারণের ঝুঁকিও একেবারে নেই।” এমনকি প্রাদেশিক এক কর্মকর্তা স্পষ্ট ভাষায় বলেন—“এটা পরিকল্পিত সামরিক হামলা ছিল না। কিছু ক্ষুদ্র শব্দ বা কম্পন হতে পারে, তবে তা দিয়ে হামলার গল্প বানানো যায় না।
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, তার দ্বিতীয় হামলা ছিল ইরানের ঐতিহাসিক ও শিল্পনগরী ইসফাহান-এ। শহরটির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ও গবেষণা অবকাঠামো নাকি ধ্বংস করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বাস্তবে ঠিক উল্টোটা দেখা গেছে।
স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকেই তাসনিম-এর প্রতিবেদকরা শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন। তারা যা দেখেন, তা শান্তির ছবি—শতাধিক প্রাতঃব্যায়াম কেন্দ্র ভোরবেলা ভরে গেছে মানুষে; কেউ শরীরচর্চা করছেন, কেউ হাঁটছেন, কেউ সকালের হালিম খেতে দোকানে ভিড় করছেন।
শহরের বাস, সাবওয়ে, ট্যাক্সি—সব চলছে পুরোদমে। কোথাও নেই কোনো বিস্ফোরণ, ক্ষয়ক্ষতি, এমনকি আতঙ্কের ছিটেফোঁটাও। স্থানীয়রা বলেন, ট্রাম্পের এই দাবি বাস্তব নয়। এটি এক ধরণের মিডিয়া যুদ্ধ বা মনস্তাত্ত্বিক অপারেশন।
যেখানে ইরানজুড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক, সেখানে বাইরের বিশ্বে তৈরি হয়েছে ব্যাপক ভয়। ইসরায়েলের বড় শহরগুলোতে লকডাউন জারি করা হয়েছে, মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এক ধরণের ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
হরমুজ প্রণালীতে সামরিক উত্তেজনা বেড়েছে, মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোর গতি-প্রকৃতি নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা প্রশ্ন তুলেছেন—আসলে কি কোনো হামলা হয়েছে? নাকি এটি একটি “মিডিয়া-সাইকোলজিক্যাল অপারেশন” যার উদ্দেশ্য ভীতি ও বিভ্রান্তি তৈরি করা?
আজকের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, শব্দের যুদ্ধ বাস্তব যুদ্ধের চেয়েও ভয়ংকর হতে পারে, যদি মানুষ গুজবে বিশ্বাস করে। ইরানিরা সেটা করছেন না। তারা বাস্তবকে দেখছে, মাটিতে দাঁড়িয়ে সত্যকে স্পর্শ করছে।
ফোরদো ও ইসফাহানের বাস্তবতা বিশ্বকে মনে করিয়ে দিচ্ছে—সত্য সবসময় শান্ত হয়, শব্দে নয়; প্রমাণে, দৃশ্যমানতায়। আর পশ্চিমা গর্জনের বিপরীতে, ইরানের আকাশ আজও শান্ত, নির্মল এবং নির্ভীক।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			