close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ফোনালাপে ই রা নে র প্রেসিডেন্টকে যা বললেন সৌদি যুবরাজ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরান-সৌদি ফোনালাপে আমেরিকা ও ইসরায়েলের মুসলিম ঐক্য ভাঙার চেষ্টা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন ইরানি প্রেসিডেন্ট। সৌদি যুবরাজও জানালেন ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান।..

মধ্যপ্রাচ্যের জটিল ভূরাজনীতির আবহে নতুন এক নাটকীয় মোড় নিলো ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের মধ্যে এক ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনায় উঠে আসে মুসলিম বিশ্বের অখণ্ডতা, আমেরিকা-ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ, ফিলিস্তিনি সংকট এবং পরমাণু ইস্যুতে ইরানের অবস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ফোনালাপে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান স্পষ্ট ভাষায় অভিযোগ করেন, আমেরিকা এবং ইসরায়েল আমাদের অঞ্চলে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আমাদের ঐক্য বিনষ্ট করতে চায়, যখন ইরান বরাবরই শান্তি ও সংহতির পক্ষে কথা বলে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আঞ্চলিক ঐক্য ও ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার রক্ষার প্রশ্নে মুসলিম দেশগুলোকে আরও একতাবদ্ধ হতে হবে। কিন্তু ওয়াশিংটন এবং তেল আবিব একে বারবার বাধাগ্রস্ত করছে। এদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতার মধ্যে ফেলে রাখা।”

ফোনালাপটি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন ১২ দিনের টানা ইসরায়েলি হামলায় গাজার অবস্থা সংকটময়। এই আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ দৃশ্যমান হচ্ছে।

পেজেশকিয়ান বলেন, “তেহরান তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ন্যায়সঙ্গত অবস্থানে আছে এবং শান্তিপূর্ণ প্রয়োগের বাইরে কিছুই করছে না। কিন্তু আমেরিকা এবং তার মিত্ররা ইরানের প্রতিরক্ষা উদ্যোগকে অজুহাত বানিয়ে হামলার পথ বেছে নিচ্ছে।”

সম্প্রতি ইরানের তিনটি শান্তিপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন বোমারু বিমানের হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা প্রতিশোধের অধিকার রাখি এবং প্রয়োজন হলে তা কৌশলগতভাবে করা হবে।

ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও জানান, সৌদি আরব ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যেকোনো আগ্রাসন বরাবরই নিন্দা করে এসেছে। আমরা চাই, এই অঞ্চল যুদ্ধের ময়দান না হয়ে কূটনৈতিকভাবে শান্তির ছায়া হয়ে উঠুক।

তিনি আরও যোগ করেন, “এই অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলো ইসরায়েলের আগ্রাসনের লঞ্চ প্যাড হিসেবে ব্যবহৃত হবে না এবং সৌদি আরব কখনোই তার ভূমিতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থেকে ইরানের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে দেবে না।”

সৌদি যুবরাজের এই বক্তব্য স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়, রিয়াদ এখন মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় নতুন ধরনের ভূমিকা নিতে প্রস্তুত। বিশেষ করে যখন মুসলিম বিশ্ব জর্জরিত ইসরায়েলি আগ্রাসন, আমেরিকান হস্তক্ষেপ এবং নিজেদের মধ্যে আস্থাহীনতার সংকটে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিভিন্ন মুসলিম দেশের সঙ্গে মিলিতভাবে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছি যেন ইসরায়েলের এই হামলা অবিলম্বে বন্ধ হয়। আন্তর্জাতিক চাপ বাড়িয়ে তাদের অপ্রীতিকর আচরণ থামানোই এখন সময়ের দাবি।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ফোনালাপ শুধু সৌদি-ইরান সম্পর্ক নয়, বরং পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। মধ্যপ্রাচ্যের দুই বৃহৎ শক্তি যখন একসঙ্গে কথা বলে, তখন বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব পড়ে গভীরভাবে।

বিশেষ করে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একতরফাভাবে মধ্যপ্রাচ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে চলেছে, তখন ইরান ও সৌদি আরবের এমন সংলাপ অনেক আশাবাদের ইঙ্গিত দেয়।

সামগ্রিকভাবে, এই আলোচনার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা স্পষ্ট — মুসলিম বিশ্ব আর বিভক্ত থাকতে চায় না। তারা ঐক্য চায়, শান্তি চায়, এবং সবচেয়ে বড় কথা, বিদেশি হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজেদের ভাগ্য গড়তে চায়।

No comments found


News Card Generator