ফলোআপ: সাতক্ষীরার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, গ্রেপ্তার -৩, রিমাণ্ডের আবেদন..

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার: avatar   
শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার:
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে এক ট্রলি সরদারকে ছিনিয়ে নেওয়া ও দুই পুলিশ সদস্য জখম হওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার..

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা: 

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে এক ট্রলি সরদারকে ছিনিয়ে নেওয়া ও দুই পুলিশ সদস্য জখম হওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর '২৫) রাতে তাদেরকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সদর উপজেলার ধুলিহর সানাপাড়া গ্রামের ইমান আলীর ছেলে কিসমত আলী (৪৩),  একই গ্রামের ফয়েজ আলীর ছেলে আশিকুজ্জামান (২৫) ও জিহাদ আলীর ছেলে ইমদাদুল ইসলাম (২৭)।

সাতক্ষীরা সদর থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ট্রলি চালকদের সর্দার কিসমত আলীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়ায় সহকারি উপ-পরিদর্শক মাহাবুর রহমান ও সিপাহী মেহেদী হাসান জখম হন।

এ ঘটনায় বুধবার রাতেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন বাদি হয়ে কিসমতসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২৫/৩০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। রাতেই অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত কিসমত আলী, সন্দিগ্ধ আসামী আশিকুজ্জামান ও ইমদাদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

বৃহষ্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর '২৫) দুপুরে তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন করে রিমাণ্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক নাজিমান্নাহার আগামি রবিবার রিমাণ্ড আবেদন শুনানীর দিন ধার্যের নির্দেশনা দিয়ে আসামীদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে ধুলিহর সানাপাড়ার শামীম সানা জানান, সুপারীঘাটা ও নেহালপুর এলাকা থেকে বেতনা খননের মাটি প্রতিদিন দুটি এসকেবেটর  মশিনে কেটে সাত থেকে আটটি হল্লা গাড়িতে করে এলাকার বিভিন্ন স্থানে বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কয়েক মাস ধরে। এতে মারাত্বক শব্দ দূষণের পাশাপাশি বায়ু দূষণ হচ্ছিল। সাধারণ মানুষ থেকে শিক্ষার্থীরা এতে খুব দুর্ভোগ পোহাতে থাকে। এ হল্লাগাড়ি বন্ধ করার জন্য তিনি ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির আইসি উপ-পরিদর্শক সোহরাব হোসেনের দ্বারস্ত হন। তিনি বিষয়টি পানি  উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগের পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে তিনি নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে বিষয়টি মৌখিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করেন। পরে তিনি জানতে পারেন যে, যুবদল নেতা পরিচয়ে পুরাতন সাতক্ষীরার মাসুদ রানা সুমন সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন ও সাতক্ষীরা আলিয়া কামিল মাদ্রাসার মাঠ ভরাটের নামে দীর্ঘদিন ধরে মাটি অন্যত্র বিক্রি করে যাচ্ছেন। 

একপর্যায়ে তিনি জানতে পারেন যে পুলিশ  লাইনের মাঠ ভরাট অনেক আগেই হয়ে গেছে। একইভাবে অনেক আগেই আলিয়া কামিল মাদ্রাসার মাঠ ভরাট হয়ে গেছে মর্মে গত ১৭ নভেম্বর লিখিতভাবে জানান ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আক্তারুজ্জামান। বিষয়টি তিনি উপপরিদর্শক সোহরাব হোসেনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেন। সে অনুযায়ি উপপরিদর্শক সোহরাব হোসেন পরিবেশ বিনষ্টকারি হল্লাগাড়ি বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। গত ২০ ডিসেম্বর তিনি তিনটি গাড়ি আটক করে সকলকে সতর্ক করেন। ২২ ডিসেম্বর বিনেরপোতা থেকে গাবতলা পর্যন্ত বেতনা নদীর উভয় তীরের জমাকৃত মাটি মাসুদ রানা সুমন, মহসিন আলীসহ ৬০ জন নিলাম কিনেছেন মর্মে জানতে পারেন। মাটি কাটার কার্যাদেশ পাওয়ার আগে যাতে মাটি কেউ চুরি করে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য মাসুদ রানা সুমন ও রুবেল বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সহযোগিতা চান। এরই সূত্র ধরে বুধবার সকালে কেসমতের নেতৃতেব ২০/২২টি ট্রলীতে করে নেহালাপুর স্লুইজ গেটের পাশ থেকে মাটি কেটে ভরাট করার সময় পানি উন্নয়ন  বোর্ডের কার্যসহকারি রাজকুমার মণ্ডল বাধা দেন। তাকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। খবর পেয়ে উপপরিদর্শক সোহরাবের নেতৃত্বে পুলিশ কেসমতকে মাটি ভর্তি ট্রলিসহ আটক করেন। এরপরপরই কেসমতের লোকজন ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে কেসমতকে ট্রলিসহ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। 

স্থানীয়রা জানান, যুবদল নেতা পরিচয়ে পুরাতন সাতক্ষীরার মাসুদ রানা সুমন পুলিশ লাইন ও আলিয়া কামিল মাদ্রাসার মাঠ ভরাট করার ঠিকাদারি নিয়ে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে বদ্দীপুর কলোনীর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুকুমার স্যারের বাড়ির সামনের পকুর, চেলারডাঙি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে বেতনা নদীর খননকৃত মাটি ভরাট করেছেন।


এ ব্যাপারে মাসুদ রানা সুমনের সঙ্গে তার ০১৭১৬-১৮১২৫৭ নম্বর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি


News Card Generator