বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসকে “জীবন্ত কবর” আর “ফ্যাসিস্ট দমননীতি” হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, বিগত সরকারের শাসনামলে দেশের মানুষ ভয় আর নিপীড়নের মধ্যে বেঁচে ছিল। জনগণ কথা বলার সাহস হারিয়েছে, কারণ রাষ্ট্রযন্ত্র পুরোপুরি ভয়ভীতির প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
রোববার (৮ জুন) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া পৌরসভা মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব বলেন। সভায় বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন এবং বলেন, “এই দেশে এমন এক সময় এসেছে যখন মানুষ চিৎকার করতে পারতো না, বিচার চাইতে পারতো না। কথিত উন্নয়নের নামে মানুষের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে, বিরোধী মত দমন করা হয়েছে।”
ডা. শফিকুর রহমান বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে, রিমান্ডে নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন জানতে চাওয়া হয়েছে। আমাদের স্বপ্ন ছিল মানবিক বাংলাদেশ—একটি গঠনমূলক সমাজ যেখানে ন্যায় থাকবে। কিন্তু গত ১৫ বছরে যা হয়েছে, তা কোনো রাজতন্ত্রেও দেখা যায় না। একনায়কতন্ত্রের সকল উপাদান কার্যকর হয়েছে এই দেশে।”
তিনি আরও বলেন, “সাড়ে ১৬ বছর আমার জনগণের সামনে দাঁড়ানোর অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমি এই সময়টুকু হারিয়ে ফেলেছি। অনেক আপনজন, সহকর্মী পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন—তাদের সামনে উপস্থিত হতে পারলে ভালো লাগতো।”
জামায়াতের আমিরের মতে, গুম ও নিখোঁজ হওয়া ছিল একটি “রাষ্ট্রীয় কৌশল”। তিনি বলেন, “আমাকে তিনবার জেলে নেওয়া হয়েছে দীর্ঘ সময়ের জন্য। সিলেটের নেতা ইলিয়াস আলী আজও নিখোঁজ। পরিবার জানে না, সে বেঁচে আছে না মারা গেছে। এভাবে কত মানুষ হারিয়ে গেছে, অথচ রাষ্ট্র নিশ্চুপ। এটি কোনো গণতন্ত্র নয়, এটি ছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।”
ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, জামায়াতে ইসলামি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০টি আসনেই প্রার্থী দেবে। তিনি বলেন, “আমরা পুরো দেশের মানুষের পাশে থাকতে চাই। যারা জনগণের জন্য কাজ করবে, আমি তাদের সাথেই থাকব। আমি কোনো রাজা নই, সাধারণ একজন মানুষ—ন্যায়ের পক্ষে যারা কথা বলবে, আমি তাদের জন্যই কাজ করব।”
তিনি আরও বলেন, “এই দেশ যদি সৎ নেতৃত্ব পায়, তাহলে পাঁচ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ বদলে যাবে। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি—দেশ যেন এমন একজন নেতার হাতে যায়, যিনি অন্যায়কে না বলে ন্যায়ের উপর অটল থাকবেন।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের আমির সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মুন্তাজিম এবং সঞ্চালনা করেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল আহমদ চৌধুরী।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন—জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর আমির মো. ফখরুল ইসলাম, ঢাকার পল্টন থানা জামায়াতের আমির শাহীন আহমেদ খান, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মো. ইয়ামির আলী, ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, শ্রীপুর জালালিয়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. শামসুল হক, প্রিন্সিপাল আবুল কালাম আজাদ, সাবেক শিক্ষক মনির উদ্দিন চৌধুরী ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক আব্দুল মোহাইমিন।
ডা. শফিকুর রহমানের এই বক্তব্যে স্পষ্ট—তিনি মনে করেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় হচ্ছে ন্যায়ভিত্তিক এবং সৎ নেতৃত্বের আবির্ভাব। তার ভাষায়, “মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়, বাকস্বাধীনতা চায়। এ দেশের মানুষ আর জীবন্ত কবর চায় না।