রংপুরে জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক তৎপরতা, তাদের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত অহিংস বিক্ষোভ এবং সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম রোববার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়ে এ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আমরা এখনও যথেষ্ট সম্মান করি। কিন্তু এখন সময় এসেছে তাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে স্পষ্ট অবস্থান ও দৃশ্যমান কার্যক্রম দেখানোর।”
জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে গভীর আঁতাতের অভিযোগ
“রংপুরে অবৈধ নির্বাচন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফা, যিনি বহুবার অনৈতিকভাবে মেয়র পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন,” সারজিস তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, জাতীয় পার্টি সাময়িকভাবে বিরোধী দলের ভান ধরে আওয়ামী লীগের ছায়াতলে থেকে ভারতসহ নানা পক্ষের সাথে দরকষাকষির মাধ্যমে সুবিধা আদায় করেছে। এমনকি যখন বিএনপি-জামায়াত অবৈধ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনের পথে থাকে, তখন জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের মুখোশ পরে সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়।
রংপুরে নতুন করে মাঠে নামার পরিকল্পনা জি এম কাদেরের
সারজিসের ভাষ্য অনুযায়ী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুর সফরে গিয়ে স্থানীয় আওয়ামীপন্থী ও জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসীদের একত্র করে নতুনভাবে রাজনৈতিক মাঠ দখলের ছক আঁকছেন।
তিনি দাবি করেন, “যখন ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য রংপুরে অহিংস বিক্ষোভ করে, তখন জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসীরা প্রথম হামলা চালায়।” এরপর জি এম কাদেরের বাড়ির সামনে একটি পুরনো মোটরবাইক পোড়ানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী বড় মাপের অনুসন্ধান শুরু করে। অথচ বিক্ষোভে হামলাকারী ও এর উৎস সন্ধানের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর নিরবতা স্পষ্ট।
সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন
সারজিস বলেন, “জি এম কাদেরের বাড়ির বাইক পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় এত ‘অপারেশন’, অথচ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিগত ৯ মাসে যেসব হত্যা ও লুটপাট চালিয়েছে, তার বিরুদ্ধে ক’টি অভিযান চালানো হয়েছে?”
তিনি আরও বলেন, “যে মোস্তফা অবৈধভাবে মেয়র হয়ে কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে, তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি। অথচ একটি আগুন লাগা বাইকের জন্য দীর্ঘমেয়াদী অপারেশন চালানো হচ্ছে!”
ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের ওপর হামলায় জাতীয় পার্টির ভূমিকা
সারজিস আলমের দাবি, জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসীরা শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধেই দাঁড়ায়নি, বরং রংপুরে আওয়ামী দখলদারদের সাথে একযোগে থেকে সাধারণ মানুষের সম্পদ লুটেও যুক্ত হয়েছে।
“৯ মাসে জনগণের ন্যায্য সম্পদ উদ্ধারের জন্য ক’টি অভিযান চালানো হয়েছে?” — এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।
সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মান বজায় রেখে হুঁশিয়ারি
নিউজের শেষ অংশে সারজিস বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আমরা এখনও যথেষ্ট সম্মান করি। তবে এই লড়াই শুধু কথার নয়, এখানে অবস্থান নিতে হবে। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তাদের বি টিম জাতীয় পার্টি পুনরায় ফিরে আসতে চাইলে তা রুখে দিতে হবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ওপর কোনো হামলা হলে কিংবা এই চক্রান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা চললে, তার জবাব মাঠেই দেওয়া হবে।”