অবরুদ্ধ গাজার ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে যখন বিক্ষোভ চলছে, তখন অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী সিডনিতেও আয়োজন করা হয় এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশের। কিন্তু সেই সমাবেশই হয়ে ওঠে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার নাম।
এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন একজন সাহসী নারী, অস্ট্রেলিয়ার উদীয়মান রাজনীতিবিদ হান্না থমাস। কিন্তু আজ, তিনি হাসপাতালের বিছানায়। কারণ, ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার দায়ে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সময় তিনি পুলিশের লাঠির আঘাতে হারাতে বসেছেন তার একটি চোখ।
গত শুক্রবার (২৭ জুন), সিডনির একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। অভিযোগ ছিল—এই কোম্পানি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে, যার মধ্যে রয়েছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশও। প্রতিষ্ঠানটি মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা খাতে কাজ করে এবং তাদের তৈরি সামগ্রী সরাসরি গাজায় হামলায় ব্যবহৃত হচ্ছে বলে বিক্ষোভকারীদের দাবি।
হান্না থমাস ছিলেন এই প্রতিবাদের সামনের সারিতে। তার মতে, গাজার মানুষদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে ন্যায্যভাবে রাস্তায় নামা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব। কিন্তু নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ বিক্ষোভকে ‘অননুমোদিত’ দাবি করে সরিয়ে দিতে আসে। কারণ, বিক্ষোভের আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হয়নি।প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, কোনো ধরণের আলোচনার পথ না মেনে সরাসরি লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এতে ৩৫ বছর বয়সী থমাসের মুখে সজোরে লাঠি পড়ে। সে মুহূর্তে তিনি পুলিশের দিকে হাত বাড়িয়ে প্রতিবাদ ঠেকাতে চেয়েছিলেন। তার ডান চোখ ফুলে উঠে, রক্তাক্ত হয়ে পড়ে তিনি। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে।
ব্যাংকসটাউন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হান্না থমাস জানিয়েছেন, এখন তার ডান চোখ দিয়ে দেখার ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে গেছে। রোববার (২৯ জুন) হাসপাতালের বিছানা থেকেই তিনি বলেন,
“আমি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিলাম। পুলিশের এই বর্বরতা চরম অন্যায়। হয়তো আমার চোখের দৃষ্টি যাবে, কিন্তু প্রতিবাদ থেমে থাকবে না।
তার চোখের এই গুরুতর ক্ষতির পরও থমাস যা বলেছেন তা যেন কাঁপিয়ে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।
“গাজার শিশুরা প্রতিদিন চোখ হারাচ্ছে, জীবন হারাচ্ছে। আমার এই আঘাত, সেই তুলনায় কিছুই না। আমি প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।”
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ দাবি করেছে, বিক্ষোভের নিয়ম না মেনেই রাস্তায় নেমেছিলেন তারা। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রশাসনের কঠোর বিক্ষোভ-বিরোধী আইন এখন স্পষ্টভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ঘটনাটির ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে। থমাসের চোখ ফুলে যাওয়া ও রক্তাক্ত মুখের ছবি দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে মানুষ। “একজন রাজনীতিক যদি এই হিংসার শিকার হন, সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ?”— এমন প্রশ্ন ঘুরছে সামাজিক প্ল্যাটফর্মে।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও হান্না থমাস জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি হাল ছাড়বেন না।
“আমি আমার চোখের দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারি, কিন্তু ন্যায়ের পথ থেকে এক চুলও সরব না। গাজার জন্য আমার কণ্ঠ থাকবে উঁচু, আগামীতেও।”
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			