close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব বিশ্বের দ্বৈত নীতি: প্রকাশ্যে সমর্থন, ভেতরে বিভ্রান্তি!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে আরব দেশগুলো প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানালেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। আঞ্চলিক রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের টানাপোড়েনে বিভক্ত অবস্থান নিচ্ছে তারা। কে কোন পথে হাঁটছে..

ফিলিস্তিন প্রশ্নে আরব বিশ্বের বিভক্ত অবস্থান: দৃশ্যত সমর্থন, বাস্তবে দ্বিধা

ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সংকটে আরব দেশগুলোর অবস্থান দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র গঠনের অধিকারকে সমর্থন করে আসছে আরব বিশ্ব। তবে বাস্তবিক রাজনীতি, নিরাপত্তা ইস্যু এবং আঞ্চলিক স্বার্থের কারণে এই সমর্থন সবসময় কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হয়নি।

জর্ডান: আশ্রয়দাতা থেকে বিবাদের কেন্দ্রে

১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের সময় প্রায় সাত লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেন জর্ডানে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পিএলও-র জর্ডানে ঘাঁটি গড়া ও সীমান্ত পেরিয়ে ইসরাইলে হামলা চালানো জর্ডানের রাজতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭০ সালে বাদশাহ হুসাইনের উপর হামলা এবং তার পাল্টা জবাবে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। বহু মৃত্যু ও সংঘর্ষের পর ফিলিস্তিনিদের লেবাননে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে জর্ডান ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে—এমন একটি পদক্ষেপ যা ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাদের দ্বৈত অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করে।

লেবানন: সহানুভূতি আছে, অধিকার নেই

জর্ডন থেকে বিতাড়িত পিএলও লেবাননে আশ্রয় নিলে, দেশটি ১৯৭৫ সালে বহু পক্ষের গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবির ছিল হামলার কেন্দ্রবিন্দু। সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে সাবরা ও শাতিলা শিবিরে, যেখানে খ্রিষ্টান মিলিশিয়াদের হাতে নিহত হন অন্তত ৮০০ ফিলিস্তিনি। তাদের সহযোগিতা করেছিল ইসরাইল।

লেবাননের সরকার ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অধিকার রক্ষায় মুখে সোচ্চার হলেও নাগরিকত্ব দিতে নারাজ। তাদের যুক্তি—ফিলিস্তিনিরা যেন লেবাননে স্থায়ী না হয়ে জন্মভূমিতে ফেরত যেতে পারে।

মিসর: মধ্যস্থতাকারী কিন্তু দ্বিধাগ্রস্ত

আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ মিসর দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করে আসছে। হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ভালো। তবে ২০০৭ সালে গাজায় হামাস ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিসর তাদের ওপর কঠোর অবরোধ আরোপে ইসরাইলকে সহযোগিতা করেছে।

১৯৭৯ সালে ইসরাইলের সঙ্গে প্রথম আরব দেশ হিসেবে শান্তিচুক্তি করেও মিসর ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকার দাবি জানায়। কিন্তু বাস্তবে তাদের প্রশাসনিক জটিলতা ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ফিলিস্তিনিদের জন্য ক্রমেই বেড়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত: অর্থনৈতিক স্বার্থে নীতিবিরোধী পদক্ষেপ

২০২০ সালে ইউএই ইসরাইলের সঙ্গে আব্রাহাম অ্যাকর্ড স্বাক্ষর করে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত ছাড়াই এই চুক্তি ফিলিস্তিনিদের আশাভঙ্গ করে। শুধু তাই নয়, ইসরাইলি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে এক কোটি ডলারের বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করে ইউএই।

সুদান: ‘তিন না’ থেকে স্বীকৃতির পথে

একসময় ইসরাইলকে স্বীকৃতি, শান্তিচুক্তি ও সমঝোতার বিরুদ্ধে সুদান ‘থ্রি নো’ নীতির ঘোষক ছিল। তবে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও প্রণোদনার ফলে সুদান ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সম্মত হয়। ফলে দীর্ঘদিনের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে এবং দেশটি ‘সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক’ তালিকা থেকে বাদ পড়ে।

কুয়েত: সমর্থনের ইতিহাস, কিন্তু বিতাড়নের দৃষ্টান্ত

১৯৯০ সালে ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের সময় ইয়াসির আরাফাত সাদ্দাম হোসেনকে সমর্থন করায় কুয়েত-ফিলিস্তিন সম্পর্ক চরম সংকটে পড়ে। যুদ্ধশেষে কুয়েত থেকে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করা হয়, যদিও ১৯৬০-এর দশকে কুয়েতই ছিল পিএলও-র শক্তিশালী অর্থদাতা।

ইরাক: অতীতে আশ্রয়, বর্তমানে নির্যাতন

সাদ্দাম হোসেনের আমলে ফিলিস্তিনিদের জন্য ইরাকে আবাসন, শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ ছিল ব্যতিক্রমী। কিন্তু ২০০৩ সালে সাদ্দামের পতনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। নতুন করে শক্তিশালী হওয়া শিয়া মিলিশিয়ারা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে সহিংসতা চালায় ও দেশছাড়া করে।


 

আরব দেশগুলোর ফিলিস্তিনপ্রীতির আবরণের নিচে রয়েছে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা, যা কখনো কখনো ফিলিস্তিনিদের স্বার্থের বিরুদ্ধে চলে যায়। কেউ কেউ প্রকাশ্যে সমর্থন জানালেও ভেতরে চলছে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের টানাপোড়েন। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট কেবল একটি মানবিক ইস্যু নয়, বরং এটি আরব বিশ্বের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কূটনৈতিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক চাপের সমন্বয়েও গঠিত একটি জটিল চিত্র।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator