নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় শহীদ আবু সাঈদের ছবি নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন মো. সুমন আহম্মেদ নামের এক তরুণ। শুক্রবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। এরপর থেকেই কেন্দুয়ায় সৃষ্টি হয় চরম উত্তেজনা। জনতার তীব্র ক্ষোভ ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো শহর।
শনিবার (২৮ জুন) সকালে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আটককৃত সুমন আহম্মেদ (১৮) কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের সান্দিকোনা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মো. রফিকুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশের তথ্য মতে, সুমন আহম্মেদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে ১৯৭৫ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদের একটি ছবি পোস্ট করেন। সেই ছবিতে তিনি ব্যবহার করেন ব্যঙ্গাত্মক ইমোজি ও অশালীন মন্তব্য, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে সৃষ্টি হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ।
সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য ছড়াতেই ‘জুলাইযোদ্ধারা’ নামে পরিচিত শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত সংগঠনের সদস্যরা রাতেই রাস্তায় নেমে পড়েন। কেন্দুয়া শহরের প্রধান সড়কে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে অভিযুক্ত সুমনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেন।
বিক্ষোভকারীরা স্পষ্ট ভাষায় জানান, “শহীদ আবু সাঈদের ছবি নিয়ে কটূক্তি শুধু একজন শহীদকে নয়, আমাদের জাতীয় সম্মান, স্বাধীনতা ও ইতিহাসকে অপমান করা। এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
তারা আরও বলেন, তরুণ প্রজন্মের মাঝে ইতিহাসচেতনা হারিয়ে যাচ্ছে। এই অবক্ষয় ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
ওসি মিজানুর রহমান জানান, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি সুমন আহম্মেদকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনার পর আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি আরও জোরদার করেছি যাতে কেউ উসকানিমূলক বা অবমাননাকর কিছু ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।”
এই ঘটনার ফলে আবারও আলোচনায় এসেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসবুকে কারো ব্যক্তিগত মতামত হোক কিংবা পোস্ট— তা যদি কারো ধর্মীয়, জাতীয় বা ঐতিহাসিক অনুভূতিতে আঘাত হানে, তবে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
এই ঘটনাটি একটি বড় সামাজিক শিক্ষা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে যা খুশি তা বলা কিংবা প্রকাশ করলেই যে সেটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হয়ে যায় না— সেই বার্তাই আজ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
শহীদ আবু সাঈদের ছবি নিয়ে করা একটি পোস্ট, একটি মন্তব্যই প্রমাণ করে দিয়েছে— ইতিহাসকে অবমাননা করলে সমাজ দাঁড়িয়ে যায় প্রতিবাদে। তরুণ প্রজন্মকে এখনই শিক্ষা নিতে হবে, স্বাধীনতার ইতিহাসকে জানতে হবে এবং দায়িত্বশীল ডিজিটাল আচরণ গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় সাইবার দুনিয়ার ভুল পদক্ষেপ সমাজে রক্তক্ষরণ ডেকে আনতে পারে।