ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির এক অনন্য প্রতীক নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ঘিরে চলছে ব্যস্ত প্রস্তুতি। তবে এবার এই আয়োজনের কেন্দ্রে উঠে এসেছে এক প্রতিবাদী প্রতীক—‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’। যা আবারও তৈরি করা হচ্ছে সমস্ত চাপ, বাধা ও বিতর্ক উপেক্ষা করে।
১২ এপ্রিল, শনিবার রাতে চারুকলা প্রাঙ্গণে নববর্ষের এই প্রতিকৃতির নির্মাণ কাজ ঘুরে দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান জানান, "এই প্রতিকৃতি শুধুমাত্র একটি শিল্পকর্ম নয়, এটি অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দৃপ্ত এক প্রতিবাদের ভাষা।"
তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন বাধা, ষড়যন্ত্র, চাপ এসেছে। তবু আমাদের মানবিক শক্তি, আমাদের পরিশ্রম, বিশ্বাস—সবকিছু মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। এ লড়াই শুধু শিল্পের নয়, এটি নৈতিকতারও। আমাদের তরুণ শিল্পীদের এই সাহসী প্রচেষ্টায় সবার সহযোগিতা চাই।”
▶ একদিনেই তৈরি করতে হবে প্রতিকৃতি!
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রতিবাদী প্রতিকৃতিটি মূল আকৃতিতে তৈরি করতে শিল্পীরা এখন দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। সময় অত্যন্ত কম—তাই তারা নির্ভর করছেন ককশীট ও সহজে মোড়ানো উপকরণের ওপর। যাতে স্বল্প সময়ে আকৃতি দাঁড় করানো যায়।
তবে এত স্বল্প সময়ে মূল আদলের মতো বিশাল প্রতিকৃতি নির্মাণ সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয়ও দেখা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “একটি কাজ যেটি এক মাস ধরে হওয়ার কথা, তা একদিনে সম্ভব কিনা তা বলা কঠিন। তবুও আমাদের শিল্পীরা যে চেষ্টা করছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা তাদের উপর বিশ্বাস রাখছি। সময়ই বলবে, তারা শেষ পর্যন্ত কতটুকু সফল হন।”
▶ প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠছে ‘মুখাকৃতি’
‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ গত কয়েক বছর ধরেই আলোচিত। শোভাযাত্রায় এটি শুধু একটি পুতুল নয়—এটি হয়ে উঠেছে প্রতীকী প্রতিবাদ, যেখানে মানুষের চেতনাকে নাড়া দেয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর বার্তা। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
চারুকলার এক তরুণ শিল্পী বলেন, “আমরা জানি সময় কম, কিন্তু এই মুখটা শুধু শিল্প নয়, আমাদের বিবেকের ভাষা। এটা তৈরি করতে পারলে যেন আমরা নিজেরাই দাঁড়িয়ে থাকব অন্যায়ের মুখোমুখি হয়ে।”
▶ নববর্ষে চারুকলার বার্তা
বাংলা নববর্ষ বরাবরই বাঙালির প্রাণের উৎসব। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা সেই উৎসবের প্রাণকেন্দ্র। প্রতিবছর এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে শুভ, সুন্দর, মানবিকতার বার্তা। আর এবার তার সঙ্গে জুড়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ভাষা।
অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার এই মুখাকৃতি যেন বেশি প্রাসঙ্গিক। কারণ প্রতিবাদের আওয়াজকে স্তব্ধ করার নানা চেষ্টার মাঝেও বাঙালি সংস্কৃতির অন্তরে থাকা সাহসী প্রতীক আবারও ফিরে এসেছে চারুকলার তরুণ শিল্পীদের হাত ধরে।



















